হ্যাকিং করে জন্মসনদ ইস্যু: রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সাড়া নেই, থমকে আছে তদন্ত

পুলিশের পক্ষ থেকে ২ দফায় চিঠি দিয়েও জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য বিশেষায়িত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় আটকে আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) আওতাধীন ৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন ইস্যু সংক্রান্ত ৩টি মামলার তদন্ত।

মামলাগুলোর তদন্তকারী সংস্থা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিরজম বিভাগ (সিটি) বলছে, ১ বছরেরও বেশি সময় আগে পতেঙ্গা থানায় ২টি ও চকবাজার থানায় এ সংক্রান্ত ১টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু তদন্তকাজে 'রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন' কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় মামলার কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি পুলিশ। তাই, কে বা কারা কীভাবে এই কাজটি করেছে তার কোনো কূল-কিনারা করা যায়নি।

তদন্তকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ধারণা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের আইডি, পাসওয়ার্ড ও সার্ভার হ্যাক করে নেওয়া জন্মসনদগুলো রোহিঙ্গা নাগরিকদের। কাজটি করেছে একটি সংঘবদ্ধ প্রশিক্ষিত চক্র।

দেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল সার্ভার bdris.gov.bd-এর আপগ্রেডেশনের কাজ চলার সময় গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের এই ঘটনাটি ঘটে। আপগ্রেডেশনের কাজ চলাকালীন সিটি করপোরেশনের উত্তর পতেঙ্গার ৪০, দক্ষিণ পতেঙ্গার ৪১ ও চকবাজারের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সার্ভার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। সে সময়েই ঘটে জালিয়াতির এই ঘটনা।

সার্ভার বন্ধ থাকলেও নিজ নিজ ওয়ার্ডের অধীনে নতুন করে ইস্যু হওয়া জন্মনিবন্ধন সনদ দেখতে পেয়ে হ্যাকিংয়ের ঘটনা শনাক্ত করার পর ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. এমদাদুল হক, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী রতন কুমার চৌধুরী ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী আহসানুল করিম গত বছরের ৯ জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় পৃথক ৩টি মামলা করেন। পরে কাউন্টার টেররিজম বিভাগ তদন্তে নামে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিএমপি কাউন্টার টেররিজমের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকার জানান, এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত বছরের ৫ জুলাই এবং চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত সেই চিঠির কোন জবাব দেয়নি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।

স্বপন কুমার সরকারের কাছ থেকে জানা যায়, চিঠিতে যে তথ্যগুলো জানতে চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- জন্মসনদ তৈরি করতে কোন আইপি থেকে লগইন করা হয়েছিল, এই কাজে কোন কোন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে, নিবন্ধনকারীর অবস্থান কোথায় ছিল এবং আইপি ব্যবহারকারী সম্পর্কিত তথ্যাদি।

এদিকে তথ্য দিতে ২ দফায় ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২০ জুলাই চট্টগ্রামের একটি আদালত যত দ্রুত সম্ভব 'রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন'কে এগুলো সরবরাহের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

২০০৪ সালে জন্মনিবন্ধন আইন করা হয়, কার্যকর হয় ২০০৬ সালে। পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া, জমি রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। শুরুতে হাতে লেখা সনদ দেওয়া হতো। এরপর ২০১০ সালের শেষ দিকে এসে তা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

চসিক সূত্রে জানা যায়, জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদনকারীকে তার বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধন বা এনআইডি এবং ছবিসহ আরও কিছু নথির দরকার হয়। অনলাইনে ডাটা ইনপুট দেওয়ার পর তা প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মুদ্রিত কপি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হয়। পরে একটি ক্রমিক নম্বরসহ ওয়েবসাইট থেকে জারি করা হয় জন্মসনদ এবং তা প্রিন্ট করে সনদ আকারে আবেদনকারীকে সরবরাহ করা হয়।

কাউন্টার টেররিজমের উপপরিদর্শক স্বপন কুমার সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন। আদালত রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।'

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ঢাকার 'রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন'- এর রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) মির্জা তারিক হিকমতের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন এই প্রতিবেদক।

গত ২৯ আগষ্ট তারিক হিকমতের অফিসিয়াল ল্যান্ডফোনে ফোন করার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, 'স্যার এখন মিটিংয়ে আছেন। বিষয়টি স্যারকে জানানোর পর আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।'

এর ২ ঘণ্টা পর ওই ব্যক্তি বলেন, 'স্যার তার মোবাইল নম্বর দিতে চাচ্ছেন না। আপনাকে তিনি ঢাকায় এসে সরাসরি দেখা করে কথা বলতে বলেছেন। উনি মোবাইলে কোনো বক্তব্য দেবেন না।'

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago