‘ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের দিনই সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে’

জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপি সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটামাত্র আশায় যে- ভারতে গিয়ে আবার কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্য একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন। কী এনেছেন? কিছুই না।

'আমরা পরিষ্কার করে বলছি, কী এনেছেন? ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এ ছাড়া, তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয়, সেদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশি একজন ১৪ বছরের বালককে, আরও ২ জন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা (সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি', বলেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে 'ইতি প্রকাশন' এর উদ্যোগে 'রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ' শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক, এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে, আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।'

'আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায়ে আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এই যে বিষয়গুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করতে করতে এবং মানুষকে পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতির নির্মাণ হতে পারে না', বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমার দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গেলে আপনি গুলি করে মারছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গেলে আপনি গুলি করে মারছেন, চাল-ডাল-তেলের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে গুলি করে মারছেন। যখন এ দেশে চরম অর্থনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেসময় জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্যগীতের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, তা কখনোই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'দমন-পীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন। আবার আগের মতো একই কায়দায় মামলা করছেন। এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।'

'এসব করে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তা অর্জন করবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'গতকাল দেখলাম হাওড়ের ওপর দিয়ে উড়াল সেতু নির্মাণ করবে। সেখানে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখা যাবে সেটা পৌঁছাবে গিয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকায় এবং এর প্রয়োজন আছে কি না, কতগুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে, সে সম্পর্কে কোনো কথা নেই।'

'বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ সমস্ত মেগা প্রজেক্ট, অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে মূল জায়গা থেকে সরে ভিন্ন জায়গায় চলে এসেছে। এখনো তারা বলে যে, দেশ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া হবে। যে দেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, দু-বেলা দু-মুঠো খেতে পারে না, যে দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বিএ-এমএ পাস করে বেকার। তারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছে, রিকসা-ভ্যান চালাচ্ছে, শ্রমিক-ভ্যান চালাচ্ছে, সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ', যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি বেঈমানি করে গণতন্ত্রবিনাসী একটা শক্তি হয়ে উঠে সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। আজকের যে অবস্থা- এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ। আজকে এই রাষ্ট্রের যে অবস্থা এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ। আজকে এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকে এই দেশে অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।'

'এই জাতিকে, এই রাষ্ট্রকে তারা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আজকে কোথাও বিচার নেই, আইনশৃঙ্খলা ধ্বংস হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কল্পনা করা যায়- একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে যারা সেখানে কথার আগেই গুলি করে মারে, গুলি করে হত্যা করে। পাকুন্দিয়ায় যে ছেলেটাকে কাছ থেকে গুলি করেছে, তার ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে। তার লিভার ফুটো হয়েছে, তার কিডনি ফুটো হয়েছে, তবে এখনো সে বেঁচে আছে', বলেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ এবং প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।

'ইতি প্রকাশন' এর ৩২০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির মূল্য ৬০০ টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The Inspector General of Police (IGP) has issued a comprehensive new dress code titled Police Dress Rules, 2025, detailing rank-wise uniforms and accessories for all Bangladesh Police members.

5h ago