৮ কন্যাকে বরণের অপেক্ষায় কলসিন্দুর

সাফজয়ী ফুটবলারদের বরণের অপেক্ষায় কলসিন্দুরবাসী। ছবি: সংগৃহীত

মেয়েদের বিশাল সাফল্যে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী কলসিন্দুর গ্রামের আনন্দের ঢেউ আশপাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। চলছে বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন।

নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের ৮ জনই গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই কলসিন্দুর গ্রামের। তারা হলেন, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, তহুরা আক্তার, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), শামসুন্নাহার (জুনিয়র), শিউলি আজিম, সাজেদা আক্তার ও মার্জিয়া আক্তার। এই ৮ জন ছাড়াও আরও অনেক কিশোরী ফুটবলার উঠে এসেছে এ গ্রাম থেকে।

গত প্রায় এক দশক ধরে দেশের নারী ফুটবল মাতাচ্ছে অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুর থেকে উঠে আসা একদল কিশোরী ফুটবলার। তাদের পায়ের জাদুতে দেশের ধুঁকতে থাকা ফুটবলে ফিরেছে আশার আলো। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তারা, লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে পরিচিতি এনে দিয়েছে ছায়া সুনিবিড় কলসিন্দুর গ্রামকে।

উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী এখন তাদের সোনার মেয়েদের বরণ করে নেওয়ার প্রহর গুনছেন। তারা জানান, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জয় পাওয়ার পর থেকেই কলসিন্দুর তথা ধোবাউড়া উপজেলাসহ গোটা ময়মনসিংহ জেলায় আনন্দের বন্যা বইছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খাঁন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফুটবল কন্যাদের জয়ে কলসিন্দুরে ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ চলছে।'

তিনি জানান, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়রা মিলে মেয়েদের জন্য একটি বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন করছেন।

চেয়ারম্যান বলেন, 'এই অদম্য মেয়েরা সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমরা তাদের নিয়ে ভীষণ গর্বিত।'

জয়ে উচ্ছ্বসিত ফুটবল তারকা সানজিদার বাবা লিয়াকত আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলাকাবাসীর মতো আমার গর্বও প্রকাশ করার মতো নয়। এটা আমাদের জীবনের সেরা আনন্দ।'

মেয়েদের স্থানীয় কোচ জুয়েল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলসিন্দুরের মেয়েদের এই সাফল্য আমাদের উৎসাহ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ক্ষুদে ফুটবলারদের নিয়মিত অনুশীলন চলছে।'

কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার অধ্যাপক মালা রানী সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয় নারী ফুটবল দলে কলসিন্দুরের মেয়েরা খেলছে, এটা অত্যন্ত গর্বের। আশাকরি আগামী দিনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে তারা আরও ভালো খেলা উপহার দেবে। নারী ফুটবলের এই উত্থান খুবই আশাব্যঞ্জক।'

তিনি আরও বলেন, '২০১১ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ দিয়ে ফুটবল শুরু করে কলসিন্দুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মেয়েরা। আজ এই কিশোরী ফুটবলাররা বিশ্বজয়ের দ্বারপ্রান্তে।'

দেশের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট জিতেছেন অদম্য এই কিশোরীরা। বদৌলতে সরকারিকরণ হয়েছে তাদের কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবর্ধনাসহ আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। অদম্য এই কিশোরীদের গল্প উচ্চ মাধ্যমিক শাখার একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে 'দ্য আনবিটেন গার্লস' (অপরাজিত মেয়েরা) হিসেবে।

মেয়েরা ফুটবল খেলবে, একসময় গ্রামবাংলায় এটা ছিল অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনতী রাণী শীল ও সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে ২০১৩, ২০১৪, এবং ২০১৫ সালে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ক্ষুদে মেয়েরা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পুলক কান্তি চক্রবর্তী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. আনোয়ার হোসেন আজ বুধবার বিকেলে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে অদম্য মেয়েদের পরিবারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

সেময় সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয় বলে জানান ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago