ইরানের ৫০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ, নিহত অন্তত ৮

ইরানের রাজধানি তেহরানে আগুন জ্বালিয়ে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ইরানের রাজধানি তেহরানে আগুন জ্বালিয়ে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ইরানে পোশাকবিধি না মানায় আটক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চলমান বিক্ষোভে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন।

সম্প্রতি, 'সঠিকভাবে' হিজাব না পরার কারণে মাহসা আমিনিকে (২২) আটক করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ 'গাশত-ই এরশাদ'। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গত শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় গত শনিবার থেকে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মাহসা আমিনিকে পুলিশি হেফাজতে মারধর করার অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা।

ইরানের এক কৌসুলি ও সংবাদমাধ্যমের বরাত নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ দিনে বিক্ষোভে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৮। তাদের মধ্যে পুলিশের এক সদস্য ও এক সরকার সমর্থক মিলিশিয়া সদস্য রয়েছেন।

ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ

ইরানের জাতিগত কুর্দি অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা দেশটির অন্তত ৫০ শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

ইরানের রাজধানি তেহরানে আগুন জ্বালিয়ে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ইরানের রাজধানি তেহরানে আগুন জ্বালিয়ে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

সর্বশেষ ২০১৯ সালে গ্যাসের মূল্য বাড়ার পর এমন বড় আকারে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল।

কুর্দিদের মানবাধিকার সংস্থা হেনগাও গণমাধ্যমকে জানায়, অন্তত ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ৩ জন নিহত হন। সংস্থাটির দাবি, এর আগে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আরও ৭ জন নিহত হয়েছেন।

রয়টার্স এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার দায় অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী নয়, বরং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে মানুষ মারা গেছেন।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ

বিক্ষোভ কমার সম্ভাবনা না থাকায় সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস, ইরানের বাসিন্দা ও হেনগাও এমনটাই দাবি করেছে।

নেটব্লকস জানিয়েছে, সরকার মূলত ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ ছাড়াও, কয়েকটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

উপসাগরীয় দেশটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম। এখানে এর গ্রাহকের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

'২০১৯ সালের পর ইরানে এখন সবচেয়ে বড় পরিধিতে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে,' যোগ করে নেটব্লকস।

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা কোনো ছবি পাঠাতে পারছেন না।

হেনগাও জানায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এ অঞ্চল থেকে কোনো ভিডিও শেয়ার করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর আগেও কুর্দি সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ ধামাচাপা দিয়েছিল বলে সংস্থাটি অভিযোগ করে।

ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মসের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিক্ষোভের নেপথ্যে

মাহসা আমিনির মৃত্যুতে ইরানিদের মনে নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে আছে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ। বিক্ষোভে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। অনেকেই বিক্ষোভের সময় হিজাব ঝাঁকান। কেউ কেউ হিজাবে আগুন ধরিয়ে দেন। আবার কয়েকজন নারী জনসম্মুখে নিজের মাথার চুল কেটে ফেলেন।

মাহসা আমিনির রহস্যজনক মৃত্য মেনে নিতে পারছে না ইরানের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স
মাহসা আমিনির রহস্যজনক মৃত্য মেনে নিতে পারছে না ইরানের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স

নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা আমিনি কোমায় চলে যান। পুলিশের এই বিভাগ ইরানে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করে থাকে। এর মধ্যে আছে নারীদের চুল ঢেকে রাখা ও জনসম্মুখে ঢিলাঢালা পোশাক পরা।

১৭ সেপ্টেম্বর আমিনির দাফন সম্পন্ন হয়।

মাহসা আমিনির বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমার মেয়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না। পুলিশি হেফাজতে সে পায়ে ব্যথা পায়। মেয়ের মৃত্যুর জন্য পুলিশ দায়ী।'

পুলিশ এ দায় অস্বীকার করেছে।

হেনগাও দাবি করেছে, ১০ জন নিহতের পাশাপাশি ৪৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে রয়টার্স এ দাবিরও সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

8h ago