ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন

কেমন গেল ইউক্রেনের ৪ প্রদেশের রাশিয়ায় যোগদানের গণভোটের প্রথম দিন

রাশিয়া ও মস্কো সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়া প্রদেশে গতকাল শুক্রবার রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণভোট শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
গণভোটের প্রথম দিন। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ও মস্কো সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়া প্রদেশে গতকাল শুক্রবার রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণভোট শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

রুশ সংবাদসংস্থা তাস জানিয়েছে, যুদ্ধের মধ্যেও এই ৪ অঞ্চলে এবং রাশিয়ায় স্থাপিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটের প্রথম দিনটি কোনো বাধা ছাড়াই চলেছে।

এদিকে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ৪ দিনের এ ভোট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ৪ প্রদেশের কিছু এলাকার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়া। সশস্ত্র দল মানুষের বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে। ভোট না দিলে চাকরিজীবীদের বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশগুলো এ গণভোট আয়োজনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভোটের ফলাফলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এসব দেশ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, 'এই ভোট কেবল আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউক্রেনীয় আইনের বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, এটি সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, একটি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ।'

 

ডনবাসে (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক) যেমন ছিল গণভোট

রুশ সংবাদসংস্থা তাসের তথ্যমতে, লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে  প্রথম দিনের গণভোট দিন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এদিন ২টি প্রদেশই ইউক্রেনের দিক থেকে গোলাগুলির খবর দিয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় দোনেৎস্কে পশ্চিমাঞ্চলে একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, লুহানস্কের রুবিঝনয় শহরে মানুষকে বোমা আশ্রয়কেন্দ্রেও ভোট দিতে হয়েছে। হামলার আশঙ্কার কারণে ডনবাস অঞ্চলের এই ২ প্রদেশের বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র প্রত্যাশিত সময়ের আগে বন্ধ হয়ে গেছে।

চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি: রয়টার্স

এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, লুহানস্কের গভর্নর সেরহি গাইদাই বলেছেন, প্রথম দিন স্টারোবিলস্ক শহরের বাসিন্দাদের বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভোট দেওয়ার জন্য মানুষকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

'বিলোভদস্ক শহরের একটি কোম্পানির পরিচালক কর্মীদের বলেছেন, ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। কেউ দিতে অস্বীকার করলে তাকে বরখাস্ত করা হবে এবং তাদের নাম নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে দিয়ে দেওয়া হবে', যোগ করেন তিনি।

খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়ায় যেমন ছিল গণভোট

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিবৃতির বরাত দিয়ে তাস জানিয়েছে, খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়াতেও প্রথম দিনের ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। তবে কিয়েভ থেকে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।

খেরসন অঞ্চলের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের উপ-প্রধান কিরিল স্ট্রেমাসভের বরাত দিয়ে তাস আরও জানায়, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী সকালে খেরসনে গোলাবর্ষণ করেছিল। কিন্তু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আক্রমণটি প্রতিহত করা হয়। এ ছাড়া, নোভায়া কাখোভকায় দিনে ১০ বারের বেশি গোলাগুলি হয়।

অন্যদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেরসন অঞ্চলের প্রথম ডেপুটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ইউরি সোবোলেভস্কি বলেছেন, 'আজ খেরসনের জনগণের জন্য সর্বোত্তম কাজ হবে তাদের দরজা না খোলা।'

তাসের তথ্যমতে, ঝাপোরিঝঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোলে একটি ড্রোন একটি বিস্ফোরক যন্ত্র ফেলে দেওয়া থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ঝাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীরাও গণভোটে অংশ নেন জানিয়ে তাস বলেছে, তাদের অনুরোধে একটি অফ-সাইট নির্বাচন কমিশন সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

প্রথম দিনে ভোটার উপস্থিতি

তাস জানিয়েছে, ডনবাসে ২০ শতাংশের বেশি নাগরিক স্থানীয় সময় ২০:০০টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন। দোনেৎস্কের নির্বাচনী তালিকায় থাকা ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং লুহানস্কের ২১ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ ভোটে অংশ নেন।

একইদিনে, খেরসনে ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ঝাপোরিঝঝিয়ায় ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোটার ভোট দেন।

Comments