জি কে শামীমের অস্ত্র মামলার রায় আজ
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে গ্রেপ্তার বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর নামে অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলায় আজ রোববার রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
এদিন দুপুর ১টায় ঢাকার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক শেখ সামিদুল ইসলামের আদালতে রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। বিচারিক আদালতের সহকারী কৌঁসুলি মো. সালাউদ্দিন হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন—শামীমের দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন (৩৯), মো. মুরাদ হোসেন (৫২), মো. জাহিদুল ইসলাম (৪১), মো. শহীদুল ইসলাম (৩৬), মো. কামাল হোসেন (৪৯), মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আমিনুল ইসলাম (৩৪)। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
গত ২৮ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালত অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন। শুনানিকালে মামলার বাদীসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
ওই বছরের ২৭ অক্টোবর র্যাবের উপপরিদর্শক ও এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখর চন্দ্র মল্লিক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, 'তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন বড় বড় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।'
ক্যাসিনোবিরোধী 'শুদ্ধি' অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে তার নিজ কার্যালয় থেকে শামীমকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে সময় তার ৭ দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়।
জব্দ তালিকা অনুযায়ী, সে সময় শামীমের কার্যালয়ে নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, ৯ হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরের ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল পাওয়া যায়।
গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মোট ৩টি মামলা করা হয়। অস্ত্র ও অর্থপাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক মামলায় শুধু শামীমকে আসামি দেখানো হয়।
গ্রেপ্তারের পর থেকে গত প্রায় ৩ বছরে ৪ দফায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে আছেন জি কে শামীম।
অর্থপাচার মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০২০ সালের ৮ আগস্ট জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে শামীমের প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ঢাকায় দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমির মালিক, যার মূল্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি একক ও যৌথ নামে ১৫৪টি প্রকল্পের কাজ পায়। গ্রেপ্তারের আগে শামীম ৬১টি প্রকল্প শেষ করে ৭৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৩ টাকা বুঝে নেন। ৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৬২ টাকার বাকি ৯৩টি প্রকল্পের কাজ তখনো অসম্পূর্ণ ছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকা–১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮–১৯ করবর্ষে জি কে শামীম ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করলেও আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকা। অনুসন্ধানকালে আরও ৫০ কোটি টাকা অর্জনের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই করবর্ষে শামীম আয়কর নথিতে ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার ৮৯ টাকা অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দিলেও কোম্পনিতে বিনিয়োগ, এফডিআর ও গাড়ি কেনা বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। নথি অনুযায়ী, জি কে শামীমের মা আয়েশা আক্তার জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির ২০ শতাংশের মালিক হলেও তার আয়ের কোনো উৎস পায়নি দুদক।
Comments