‘ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলো অপরাধীদের কাজ’

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ছাত্রীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছে। গত আগস্টেও নির্যাতনের সময় ২ শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গতকাল কলেজ ছাত্রলীগের ২ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এসব বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের সঙ্গে।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, 'এ ধরনের ঘটনা ভালো কিছু না। আমরা এ ধরনের ঘটনা ভালোভাবে দেখি না। ভালো কিছু করার জন্য আমরা উদ্যোগ নেব।'

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'ছাত্ররাজনীতির নামে আমাদের দেশে যা হচ্ছে, সেটা তো প্রকৃত অর্থে ছাত্ররাজনীতি না। ছাত্ররাজনীতি মানে শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্য কাজ করার রাজনীতি। ইডেন কলেজে সিট নিয়ে, টাকা আয়ের জন্য, সুবিধা পাওয়ার জন্য যা করা হচ্ছে, সেটা তো ছাত্ররাজনীতি না, অন্যায়। এখন অন্যায় কাজগুলোকে আমরা ছাত্ররাজনীতি নাম দিয়ে দিচ্ছি। এ থেকে বোঝা যায় যে, জাতীয় রাজনীতির স্বার্থেই ছাত্ররাজনীতি চলছে। শিক্ষায় বরাদ্দ, শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনো কথা হয় না। সেগুলো নিয়ে ছাত্রনেতাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।'

'ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, এগুলো তো অপরাধীদের কাজ। অভিযোগ সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু, সেটা তো হবে না। কারণ, এসব নেত্রীরাই সরকারের প্রহরী, সৈন্য। কিংবা আরেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের ব্যবহার করবে। ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাধ করা হচ্ছে। ইডেন কলেজে যেসব অন্যায় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কাজ কল্পনা করা যায়?', যোগ করেন তিনি।

ইডেন কলেজের পরিস্থিতিকে 'চূড়ান্ত নৈরাজ্য' হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার বা দলটির শীর্ষ নেতারা শুধু সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকেই ধ্বংস করেনি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও ধ্বংস করেছে। ছাত্রলীগের মতো একটি গৌরবময় সংগঠনকে তারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতিসহ অনৈতিক সব কর্মকাণ্ডে অভ্যস্ত করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার গার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। এগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। কারণ যতক্ষণ তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য সৈনিক হিসেবে ছাত্রলীগ পথে থাকবে, ততক্ষণ তারা সব অনাচার সহ্য করবে। এ বার্তাটিই যখন ছাত্রলীগ পায়, তখন তরুণ বয়সী ছেলে-মেয়েরা এটাই করবে। এরই উদাহরণ আমরা ইডেন কলেজে দেখছি।'

অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতে, ইডেন কলেজের এসব ঘটনার সম্পূর্ণ দায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের।

ইডেন কলেজ প্রশাসনের গাফিলতিতেই সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে এবং এরকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন ছাত্রলীগ প্রশাসনে পরিণত হয়, তখন সেখানকার পরিস্থিতি এমনই হয়। ইডেন কলেজের প্রশাসন মোটেও কার্যকর নয়। ফলে সেখানে এ ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে।'

যখন প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থাকে, তখনই সিট-বাণিজ্যের মতো ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, 'প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে সিট বণ্টন সুচারুভাবে করা। প্রশাসন না করে যখন নেত্রীরা সিট বণ্টন করে, তখনই সিট কেনা-বেচার ঘটনা ঘটে। সেটার প্রকাশ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখি। সেটারই আরেকটা সংস্করণ ইডেন কলেজ।'

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে বাধ্য করানোর অভিযোগ বিষয়ে অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, 'কলেজের শিক্ষকদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করার কথা। সেই আস্থা থেকেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের হলে থাকতে দেন। কিন্তু, যখন শিক্ষকরা অভিভাবকের ভূমিকা পালন না করে রাজনৈতিক কর্মী হয়ে ওঠেন, সরকারি ছাত্র সংগঠনের পক্ষে কাজ করেন, তখনই এ ধরনের সংকট তৈরি হয়।'

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি শুরু হলে এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এখন আমাদের প্রচলিত যে রাজনীতি, সেটা তো আসলে অপরাধনীতি। এই অপরাধনীতিকে ঘিরে একটা ব্যবসায়িক চক্র তৈরি হয় অর্থ-শক্তি অর্জনের জন্য। রাজনীতির গুণগত মানের সেই জায়গাটায় পরিবর্তন না এনে যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম শুরু করা হয়, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা রয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ৩ বার করে ফোন দিলেও তারা ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তারা এর জবাব দেননি।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

14h ago