ক্যানসার চিকিৎসার একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন ৩ মাস ধরে নষ্ট

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্যানসার রোগীরা।

মেশিনের পেমেন্ট পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্থানীয় সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কোনো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও মেশিনটি মেরামত করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, মেশিনটির মাদার কোম্পানি জার্মান একার্ট অ্যান্ড জিগলার বিবিআইজি যতক্ষণ তাদের কোনো নির্দেশ না দিচ্ছে, ততক্ষণ তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যাঁতাকলে পড়ে রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

গত ৬ জুন হাসপাতালের একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি বিকল হয়ে যাওয়ার পর বিশেষ করে জরায়ুমুখের ক্যানসারের রোগীরা খুব ভোগান্তিতে পড়েছেন।

চমেক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের মে মাসে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি ওয়ার্ডে ব্র্যাকিথেরাপি সেবা শুরু হয়। চমেক হাসপাতাল ছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার অন্য কোনো হাসপাতালে ব্র্যাকিথেরাপি সেবা পাওয়া যায় না। তাই স্থানীয় রোগীরা ছাড়াও কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও ফেনীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে রোগীরা সেবার জন্য চমেক হাসপাতালে আসেন।

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, বছরে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মহিলা রোগীকে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ রোগী জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসার কোনো না কোনো সময় ব্র্যাকিথেরাপির প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তদের জন্য এই থেরাপি অপরিহার্য।

ওয়ার্ড সূত্র জানায়, হাসপাতালের একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি গত ৬ জুন হঠাৎ করেই বিকল হয়ে যায়। মেশিনটি এখন নষ্ট থাকায় এ হাসপাতালে ব্র্যাকিথেরাপি সেবা বন্ধ আছে। ফলে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সামর্থ্যবান রোগীরা ঢাকায় গিয়ে এই সেবা নিতে পারলেও যাদের সামর্থ্য নেই, তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি ৬ জুন বিকল হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি তৎক্ষণাৎ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

তিনি বলেন, 'মেশিনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যানিং সিস্টেমে (টিপিএস) প্রযুক্তিগত ত্রুটি পাওয়া গেছে। আমরা স্থানীয় সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা বলেছে যে, মেশিনের কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং এই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।'

তিনি হাসপাতালে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগদানের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, 'চমেক হাসপাতালে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের কোনো পদ নেই। তাই হাসপাতালের ব্যয়বহুল এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সব মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।'

ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনের গুরুত্ব উল্লেখ করে অধ্যাপক সাজ্জাদ বলেন, 'জরায়ুমুখের ক্যানসার ছাড়াও খাদ্যনালীর ক্যানসার, মুখের ক্যানসার এবং জিহ্বা ক্যানসারের রোগী, যাদের শরীরের বাইরের অংশে রেডিওথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা যায় না এবং যাদের অপারেশন করা যায় না, তাদের ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (সিএমএসডি) চমেক হাসপাতালের জন্য মেশিনটি বরাদ্দ করেছে। আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে সিএমএসডি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমি মেশিনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে যে, পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। আমি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেছি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী বছরে একটি নতুন মেশিন আমাদের সরবরাহ করা হবে। আমরা বর্তমান মেশিনটিও মেরামতের চেষ্টা করছি।'

তবে কবে থেকে রোগীরা চমেক হাসপাতালে ব্র্যাকিথেরাপি সেবা পাবেন তা বলতে পারেননি হাসপাতালের পরিচালক। তিনি বলেন, আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী এসএম শফিকুজ্জামান বলেন, 'মাদার কোম্পানি একার্ট অ্যান্ড জিগলার বিবিআইজি নামের জার্মান কোম্পানির কাছে মেশিনটির মূল্য এখনও পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়নি। মাদার কোম্পানি আমাদেরকে কাজ করতে না বলা পর্যন্ত আমরা মেশিনের কোনো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে পারি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

6h ago