খেরসনে পুতিনের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ প্রায় ৮ মাস পর দেখা যাচ্ছে মস্কোর দখলে থাকা একমাত্র বড় শহর খেরসনও হাত ছাড়া হওয়ার পথে।
নভগরদ অঞ্চলের মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২)। পুতিনের সাম্প্রতিক সব ছবিতে তাকে দু:চিন্তাগ্রস্ত দেখা যায়। ছবি: রয়টার্স
রয়টার্স ফাইল ফটো

ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' প্রায় ৮ মাস পর দেখা যাচ্ছে মস্কোর দখলে থাকা একমাত্র বড় শহর খেরসনও হাত ছাড়া হওয়ার পথে।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি সংযুক্ত করে নেওয়া ইউক্রেনের ৪ অঞ্চলের অন্যতম খেরসন থেকে ইতোমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

'ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী খেরসনের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাতে পারে'—এমন আশঙ্কায় সেখানকার ১ লাখ ৩০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।

রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় খারকিভে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় খারকিভে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

কিয়েভের ক্রমাগত হামলার মুখে অধিকৃত খেরসন অঞ্চলের রাজধানী খেরসন শহরের পতন হলে নিশ্চিতভাবে আরও চাপে পড়বেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গত মঙ্গলবার রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি জানায়, ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়ার নতুন কমান্ডার সেরগেই সুরোভিকিন সংবাদমাধ্যম রোশিয়া টুয়েন্টিফোরকে বলেছেন, 'খেরসনের পরিস্থিতি "উদ্বেগজনক।"

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনীকে "কঠিন সিদ্ধান্ত"নিতে হতে পারে।' তিনি সেখানকার অধিবাসীদের কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি।

সন্দেহ নেই, সুরোভিকিনের এমন বক্তব্যে খেরসনে রুশ বাহিনীর দুর্বল অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরু থেকে খেরসন অঞ্চলে নিপ্রো নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম ও কৃষিজমি ইউক্রেনীয় সেনারা পুনর্দখল করেছেন।

শুধু তাই নয়, ইউক্রেনীয় সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলায় নদীটির ওপর রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সেতুগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, রসদ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে রাশিয়া-সমর্থিত খেরসন প্রশাসনের উপপ্রধান কিরিল স্ট্রিমোওসোভ বলেন, 'পশ্চিমের দেশগুলোর চাপে ইউক্রেনীয় নাৎসিরা খেরসনে হামলা চালাবে।'

গতকাল খেরসনে ইউক্রেনের আঞ্চলিক কাউন্সিলের উপপ্রধান ইউরি সোবোলেভস্কি সিএনএনকে বলেন, 'আমরা খেরসনকে স্বাধীন করবো। তুমুল লড়াই হবে। স্থানীয়রা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বেন।'

ভার্চুয়াল বৈঠকে পুতিন। ছবি: এপি
ভার্চুয়াল বৈঠকে পুতিন। ছবি: এপি

অধিকৃত ৪ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন সেখানে সামরিক আইন জারি করেছেন। পাশাপাশি, ইউক্রেনের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ক্রিমিয়াসহ রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে সতর্কতাও জারি করেছেন তিনি।

রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে—এগুলো ছাড়াও ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। রিজার্ভ সেনাদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ১ লাখ ৯৫ হাজার রুবল করার হুকুম দিয়েছেন তিনি।

এসবই পুতিন করছেন খেরসনে তার 'অগ্নিপরীক্ষা'র পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত প্রায় ৮ মাসে পুতিন ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ছাড়া তেমন কোনো সামরিক সাফল্য দেখাতে পারেননি। উল্টো গত কয়েক মাসে তার বাহিনী ইউক্রেনীয়দের প্রতিহামলায় 'পিছপা' হয়ে অধিকৃত দেশটির পূর্ব সীমান্তে আটকে পড়েছে।

এবার খেরসনের পতন হলে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সীমান্তে নজর রাখতে পারবে। তাই এই অঞ্চলটি রক্ষায় পুতিনকে মরণপণ লড়াইয়ে নামতে হবে বলে মনে করছে বিবদমান পক্ষগুলো।

কিয়েভ চাচ্ছে শীত জাঁকিয়ে বসার আগেই খেরসন পুনরুদ্ধারে মরণ কামড় বসাতে। অন্যদিকে, ক্রেমলিন চাচ্ছে সম্মান বাঁচাতে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সাফল্য ইউক্রেনীয়দের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।

রেলস্টেশনকে বোমা হামলা থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন কিয়েভের বাসিন্দারা। ছবি: এপি
রেলস্টেশনকে বোমা হামলা থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন কিয়েভের বাসিন্দারা। ছবি: এপি

কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, মরণপণ লড়াইয়ের প্রস্তুতিতেই হয়তো রাশিয়া খেরসন থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিচ্ছে।

আবার কারো মতে, বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে রুশ সেনারা নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পথ পরিষ্কার করছেন।

তারা মনে করেন, ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়া এখন বেশ দুর্বল অবস্থানে আছে। খেরসনের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে সিএনএন'র বিশ্লেষক মিক ক্রেভা বলেন, মস্কো হয়তো শিগগির যুদ্ধে তার অন্যতম বড় অর্জনটি হারাতে যাচ্ছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে উল্লেখ করে বিবিসির বিশ্লেষক স্টিভ রোজেনবার্গ মনে করেন—পুতিন নিশ্চয় ভাবছেন যে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে তিনি চরম ভুল করেছেন। তাকে এখন শুধু ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলই নয়, পৃথক পৃথক আদেশ দিয়ে পুরো রাশিয়াকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকতে হচ্ছে।

রাজনীতিতে আসার আগে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এজেন্ট ছিলেন পুতিন। ছবি: উইকিপিডিয়া
রাজনীতিতে আসার আগে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এজেন্ট ছিলেন পুতিন। ছবি: উইকিপিডিয়া

ক্রেমলিনের এসব ব্যবস্থা রাশিয়ার নাগরিকদের যে খুব নিশ্চিতে রাখতে পারছে তা নয়। এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছে মস্কোর মেয়র সেরগেই সোবিয়ানিমকে। তিনি নগরবাসীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হবে না।

সব মিলিয়ে বলা যায়, খেরসন পরিস্থিতি পুতিনকে যে 'অগ্নিপরীক্ষা'য় ফেলেছে তা তার 'কঠোর' আচরণেই প্রকাশ পাচ্ছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

23h ago