দূষণের দায়ে বন্ধ হচ্ছে সাভারের ১৯ ট্যানারি 

ফাইল ছবি

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকা এবং দূষণের দায়ে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ১৯টি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। 

আজ বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নেই। 

গত বছরের আগস্টে দূষণের দায়ে শিল্পনগরী আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এরপরও দূষণ বন্ধে একাধিকবার সুপারিশ করেছিল কমিটি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। 

এমন পরিস্থিতিতে এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গত সেপ্টেম্বরে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি।

ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হবে। একটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেছে, আরেকটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে এবং যাদের কমপ্লায়েন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে তৃতীয় ভাগে।

সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ১৯টি কারখানা কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। এগুলো কমপ্লায়েন্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কমিটি। তাই এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—নিশাত ট্যানারি, ইব্রাহিম ট্যানারি, সিটি লেদার, সবুজ করপোরেশন, এমএ লেদার, মেট্রো ট্যানারি, মুন ট্যানারি, লিয়েন এন্টারপ্রাইজ, ইন্টারন্যাশনাল ট্যানারি, মমতাজ ট্যানারি, জিন্দাবাদ ট্যানারি, গোল্ডেন লেদার, জামান ট্যানারি, সাহী ট্যানারি, ফালু লেদার করপোরেশন, হাইটেক লেদার, ইসমাইল লেদার, এস অ্যান্ড এস ট্যানারি ও জহির ট্যানারি।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, '১৯টি ট্যানারি কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। এগুলো কমপ্লায়েন্ট হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।' 

তিনি জানান, এ ছাড়া ১৯টি ট্যানারি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শর্তগুলো পূরণ করছে। এগুলোকে সাময়িক ছাড়পত্র দেওয়া হবে। আর ১০৩টি ট্যানারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কতটুকু মেনে চলছে সে বিষয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তারপর সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।'

সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, 'পুরো ট্যানারিতে প্রতিদিন ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা আছে। কমিটি বলেছে, যেন প্রতিদিন ২০ হাজার ঘনমিটারের বেশি পরিশোধন করা না হয়।'

এর আগে ট্যানারি ছিল ঢাকার হাজারীবাগে। সেখানে ট্যানারিগুলো দিনে প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলতো। 

এ ছাড়া চামড়ার উচ্ছিষ্ট বেড়িবাঁধের পাশে, খালে, জলাধারে ও রাস্তার পাশে ফেলা হতো। এতে ব্যাপক দূষণের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গা। 

এই সমস্যার সমাধানে শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প হাতে নেয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪টি ট্যানারিকে প্লট দেওয়া হয়। তবে সেখানে সিইটিপি যথাযথ মান অনুযায়ী হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও মালিকেরা সিইটিপি প্রস্তুত নয় এমন যুক্তিতে ট্যানারিগুলো সাভার শিল্পনগরে নিতে চাইছিলেন না। 

২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সাভারে যাওয়ার ট্যানারির বর্জ্যে দূষণের কবলে পড়ে ধলেশ্বরী নদী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Muslim pilgrims pray at Mount Arafat in hajj apex

Thousands of pilgrims began to gather before dawn around the hill and the surrounding plain

1h ago