কতটা যৌক্তিক হলো বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। (বাম দিক থেকে)

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম হবে ৬ টাকা ২০ পয়সা, যা আগে ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা।

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদঅধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেনের সঙ্গে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'সরকার এর পেছনে যুক্তি দেবে যে তারা ভর্তুকি দিচ্ছে, সেই ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হবে। আইএমএফও বলেছে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে। এই ভর্তুকি কাদের দেওয়া হচ্ছে, কেন দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা না দেওয়ার পথ কী— এগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় না। বিদ্যুৎখাতের বড় ভর্তুকি যাচ্ছে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কারণে। যে কেন্দ্রগুলোর দরকার ছিল না, যেগুলোর সময় বাড়ানোর দরকার ছিল না, যেগুলো উৎপাদন করেনি, তাদেরকেও টাকা দিতে হয়েছে। ১১ বছরে এর জন্য দিতে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।'

'গত কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে। আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, কিন্তু তাদের মুনাফা হচ্ছে। কারণ জনগণের টাকা থেকে তাদের দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পুরো বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা জনগণকে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য না। মানুষকে বিদ্যুৎ না দিয়ে একটি গোষ্ঠীকে টাকা দেওয়ার জন্য এই পরিকল্পনা। ফলে ভুক্তভোগী শেষ পর্যন্ত জনগণই', বলেন তিনি।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিণতিতে আবারও দেশে সব জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, 'পাইকারিতে দাম বাড়বে, আর সেটা গ্রাহক পর্যায়ে বাড়বে না, সেটা তো হয় না। পাইকারিতে দাম বাড়লে সেটার প্রভাব গ্রাহকের ওপর পড়বেই।'

বিইআরসির গণশুনানি 'প্রহসন' ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গণশুনানিটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গণশুনানিতে যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয় এবং তারপরে যে লজিক্যাল কনক্লিউশন আসে, সেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পর্ক থাকে না। কারণ সরকার সিদ্ধান্তটা আগে নেয়। তারপর সেটাকে রেশনালাইজ (যৌক্তিক করে তোলা) করার চেষ্টা করে। রেশনালাইজ যখন করতে পারে না, তখনো সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে। তার মানে এই গণশুনানির কোনো মানে নেই। এটা একটা নাটক ছাড়া আর কিছুই না।'

অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় এটা গ্রহণযোগ্য বৃদ্ধি। কারণ শুনানির সময় বিদ্যুতের দাম ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু, এখন তারা ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সুতরাং আমি মনে করে এটা গ্রহণযোগ্য বৃদ্ধি।'

'তবে, বিদ্যুতের দাম দীর্ঘমেয়াদে কমাতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ যেন বেশি থাকে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরিয়ে দিতে হবে। তারা বলেছিল এগুলো থাকবে না। কিন্তু, ১০ বছর হয়ে গেছে, এখনো সেগুলো আছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রের কারণেই বিদ্যুতের দাম বাড়ে', বলেন তিনি।

গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দামবৃদ্ধি না করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, 'এখন পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হলো। গ্রাহক পর্যায়ে বৃদ্ধিটা যদি ১ বছর পরে করা হয়, তাহলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। অন্যথায় গ্রাহকদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। কারণ, এখন এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি। এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে না বাড়ানেই উচিত হবে। বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

6h ago