কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং বন্ধ হবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে সারা পৃথিবীর বাজার পরিস্থিতি দেশের ভেতরে বসেই দেখা যাবে। এর ফলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আজ সোমবার ঢাকায় এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন।

রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ মিলনায়তনে 'বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম। ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সাবেক সভাপতি আজম যে চৌধুরী এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান।

আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যের ঘোষিত মূল্য প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি বা কম দেখিয়ে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।

দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর লক্ষ্যে কাজ চলছে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের নিজেদের যদি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হয়ে যায়, তখন আপনারা এখানে বসেই দেখতে পারবেন ঘানায় আজকে চালের দাম কত বা আমাদের গার্মেন্টস পণ্য কোন দেশ কত দামে নিতে চায়। আমরা এখানে বসেই সারা পৃথিবীর বাজার এবং নিজেদের বাজার দেখতে পারব। তখন আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা কর্মসংস্থান। ভালো লোককে, ভালো বেতন দিয়ে ভালো কাজ ঠিক করে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছিলাম। ঠিক সে সময় এমন এক জায়গায় যুদ্ধ বেঁধে গেল, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ল। যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস ও জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যেখান থেকে বিভিন্ন দেশে খাদ্য যায়, সেই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে গেল। তার সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রভাব পড়তে শুরু করল।

তিনি বলেন, জ্বালানির ওপর যখন প্রভাব পড়ে, তখন সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। যুদ্ধ শুরুর পর যে ধাক্কা আসল তাতে আমাদের সবকিছু অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। যেখানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বেশি সেখানে লোডশেডিংয়ের ধাক্কা আসল। যে দেশের মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই দেশে আমাদেরকে সরকারিভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এতো বড় ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে গেছে, যার ধাক্কায় যুক্তরাজ্যে তিন বার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। চার-পাঁচটা দেশের লিডারশিপ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা পড়িনি।

শিবলী বলেন, যে ধাক্কা আমাদের লাগার কথা ছিল, তার থেকে কম লেগেছে। সরা পৃথিবীতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যেখানে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, সেখানে আমাদেরকে প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কারণে আমরা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সাময়িক একাটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা স্থায়ী ব্যবস্থা না।

শেয়ারবাজারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান সেমিনারে বলেন, আমাদের বাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। আমরা মোটামুটিভাবে মানুষের কথা শুনে বিনিয়োগ করি। এটা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং দক্ষ জনবলের সংখ্যা কম।

তিনি বলেন, আমাদের বাজারে পলিসি সাপোর্ট অপর্যাপ্ত। ব্যাংকের ৬-৯ যে সুদের হার আছে এর অর্থ হলো আমি ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারব। কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছে গেলে ৮ শতাংশ সুদেও ঋণ দেবে। তখন কি তারা পুঁজিবাজারে যাবে। পুঁজিবাজারে আসলে তাকে এর থেকে বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই। খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হব। আমরা ইতোমধ্যে নিয়ম ঠিক করে বিএসইসির কাছে পাঠিয়েছি। বিএসইসি অনুমোদন দিলে শিগগির কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে পারব।

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

2h ago