বিদেশি মিশনগুলোতে চিঠি দেওয়া কি সরকারের ‘স্ববিরোধী’ আচরণ?

বিদেশি মিশনগুলোতে চিঠি দেওয়া কি সরকারের ‘স্ববিরোধি’ আচরণ
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিএনপি যখন ঢাকার কূটনৈতিক মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে, সরকার তার সমালোচনা করে। রাষ্ট্রদূতরা যখন দেশের রাজনীতি, মানবাধিকার বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন, তখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সরকার। এখন আবার সরকার নিজেই বিদেশি মিশনগুলোতে চিঠি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৭ ডিসেম্বর দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকার কূটনৈতিক মিশনগুলোতে চিঠি দিয়েছে সরকার।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের কারণও উল্লেখ করা হয়েছে এই চিঠিতে।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি কথা বলেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে।

আব্দুল মোমেন বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে বাকী ২ জন এভাবে কূটনৈতিক মিশনগুলোতে চিঠি দিয়ে জানানোর বিষয়টি প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করছেন।

বিরোধীদলগুলো যখন বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়। এখন সরকার নিজেই কেন তাদেরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানালো এমন প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, 'কোনো ঘটনায় কী হয়েছে না হয়েছে, সেই বিষয়ে ঢাকার কূটনৈতিক মিশনগুলোতে সঠিক তথ্য যায় না। মিশনগুলো মূলত কিছু তথাকথিত সুশীল সমাজ যারা আসলে রাজনৈতিক কর্মী তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। সেজন্য আমরা তাদেরকে জানিয়েছি ৭ ডিসেম্বর আসলে কী ঘটেছে।'

এর আগে কখনো এভাবে তাদেরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি এবার কেন জানানো হলো জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'দুনিয়ার সবকিছু পরিবর্তনশীল। আগে কখনই রাষ্ট্রদূতরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়ে কথা বলেননি। এটি তাদের অভ্যাস ছিল না। এখনো বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে এটি নেই। কোনো সাংবাদিক বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়ে কোনো আলাপ করেন না। কিন্তু আপনাদের (সাংবাদিকদের) কারণে আমাদের দেশে একটি নতুন রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। যেটি খুবই অগ্রহণযোগ্য। আপনারা (সাংবাদিকরা) মনে করেন বিদেশিরা দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে মীর জাফরদের কাহিনী। বিদেশিরা কীভাবে ২০০ বছর গোলাম করে রেখেছিল। বিদেশিরা বড়লোক হয়েছে দরিদ্র দেশগুলোকে চিবায়ে খেয়ে। যদি স্থানীয় লোক তাদের সাহায্য না করতো, তাহলে তারা চিবায়ে খাইতো না।'

এই চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে তারা যে বক্তব্য রাখে সেগুলো কি আমলে নেওয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'তাদেরকে আমরা জানিয়ে রাখছি কারণ তারা আমাদের দেশে আছেন। তাছাড়া তারা অভিযোগ করেন যে, আমরা তাদের কিছু বলি না। তখন তো তাদের জানাতে হয়।'

শমশের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, 'সরকার নিজেই বলে থাকে আমরা বিদেশিদের হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা কেন নাক গলাবে। এখন সরকারের পক্ষ থেকেই ৭ ডিসেম্বরের ঘটনা কূটনৈতিক মিশনগুলোতে চিঠিটি দিয়ে জানানো হয়েছে। এমন বিষয় আগে শুনিনি। আমি মনে করি এটির প্রয়োজন ছিল না।'

এই সাবেক কূটনৈতিক বলেন, 'আগ বাড়িয়ে এই ঘটনা জানানোর প্রয়োজনীয়তা কী ছিল, তা আমি বুঝতে পারছি না। এই চিঠি না দেওয়াই ভালো ছিল। এভাবে চিঠি দেওয়াতে যা হলো, সরকার বিদেশি দূতাবাসগুলোর মতামতকে আমলে নিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বিদেশি দূতাবাসগুলো যারা দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তাদেরকে চা চক্রের মাধ্যমে জানাতে পারতো। চিঠি দিয়ে তাদের মতামতকে আমলেই নেওয়া হলো।'

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'বিরোধীদলগুলো বিদেশি মিশনে যোগাযোগ করলে সরকার সমালোচনা করে। এখন তারা আবার নিজেরাই যোগাযোগ করে। এটি সরকারের স্ববিরোধিতা। ক্ষেত্র বিশেষে আগে থেকেই নিয়ম ছিল কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিকদের ব্রিফিং করার। চিঠি দিয়ে এভাবে জানানো একটা কৈফিয়ত দেওয়ার মতো বিষয় হলো। এটা আগে শুনিনি।'

Comments

The Daily Star  | English

‘For 15 years I fought for BNP leaders and activists, today they pushed me’

Rumeen Farhana says she was almost knocked down during clash at EC over Brahmanbaria boundaries

2h ago