‘ম্রো পাড়ায় হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ঘৃণিত অপরাধ’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পাহাড়ে বসবাসকারী খুব শান্তিপ্রিয়। তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তাদের ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগকারীরা কোনোভাবেই পার পাবে না।  
 ‘ম্রো পাড়ায় হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ঘৃণিত অপরাধ’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। ছবি: স্টার

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পাহাড়ে বসবাসকারী খুব শান্তিপ্রিয়। তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তাদের ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগকারীরা কোনোভাবেই পার পাবে না।  

বান্দরবানে লামার সরইয়ে রেঙয়েং ম্রো পাড়ায় গত ১ জানুয়ারি গভীর রাতের হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে শিকার পরিবার ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'সাংবাদিকরা সঠিক সময়ে এই মর্মান্তিক ও বসতবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ প্রকাশ না হলে আমরা কেউ জানতে পারতাম না। এই গ্রামে যা হয়েছে, আমি যা দেখেছি, এ ঘটনাগুলো যে বা যারা ঘটিয়েছে, তারা চরম অপরাধ করেছে। এই ম্রো পাড়ায় বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ঘটনায় জড়িতরা কখনো ছাড় পাবে না। যারা অন্যায় করেছে তাদের বিষয়ে খবর নিয়ে, সঠিক তথ্য ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে ভূমির মালিক যারা তাদের অধিকার সবার উপরে থাকবে।'

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এর আগে ৫ জানুয়ারি সেখানে পরিদর্শনে যান কমিশনের ৪ সদস্যের একটি তদন্ত দল।

গত ১ জানুয়ারি রাতে ঘুমন্ত ম্রো জাতিগোষ্ঠীর ৩টি বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করা হয়। ওই সময় ৩টি ঘরে হামলা চালিয়ে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। আরও ২টি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে নগদ অর্থ, ঘরের জিনিসপত্র ও গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা।

ভুক্তভোগীরা ওই ঘটনার জন্য 'লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড' কর্তৃপক্ষ ও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করে আসলেও, অভিযোগ অস্বীকার করেছে কোম্পানিটি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আরও বলেন, 'এ বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়ার দরকার আছে। গত বছরের ২৬ এপ্রিল প্রথম যখন আগুন দেওয়া হয় তখন থেকে তদন্ত করা শুরু হয়। কিছু তথ্য পাওয়ার বাকি ছিল। সেগুলো নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টায় ছিলাম। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে ১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর জন্য আমরা নিজেরাও দুঃখিত।'

ওই সময় সরই ভূমিরক্ষা কমিটির পক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হাতে একটি স্মারক লিপি দিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব ও রেংইয়েন পাড়ার কারবারি রেংইয়েন ম্রো।

গত বছর ২৬ এপ্রিল বান্দরবানের লামার উপজেলার সরই এলাকায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বসবাস করা ৪০০ একর ভূমিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৩৫০ একর জুমভূমি পুড়ে যায়।

৪০০ একর ভূমি রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ৩ পাড়াবাসী। অন্যদিকে এই ৪০০ একর ভূমি নিজেদের ইজারার জায়গা বলে দাবি করে রাবার কোম্পানি 'লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড'।

রেঙয়েন, লাংকম ও জয়চন্দ্র পাড়াবাসীরা ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সামনে দাবি করেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করে আসলেও কারো সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। কোনোদিন মারামারি হয়নি। হঠাৎ রাবার কোম্পানি লোকেরা এসে ঝামেলা করেছে। আমরা আমাদের মতো করে বাঁচতে চাই।

 

Comments