‘আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত করবে’

আন্তোয়েনেট
আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ। ছবি: শেখ এনামুল হক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ বলেছেন, তাদের ঋণ কর্মসূচি মূলত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

গত সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করেছে, দারিদ্র্য হ্রাস করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনেক সূচকে স্থিতিশীল অগ্রগতি করেছে।

তিনি বলেন, '২০৩১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে সফলভাবে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে এই সাফল্য ধরে রাখা, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উত্পাদনশীলতা বাড়াতে এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে কাঠামোগত সমস্যা সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা বিশ্বাস করি এই ঋণ সহায়তা এসব করতে সাহায্য করবে।'

এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ৪ দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা সায়েহ উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ২টি ক্ষেত্র যথেষ্ট ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এই ২টি ক্ষেত্রে বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে রাজস্ব ও আর্থিক খাত।

বাংলাদেশের প্রায় ৯ শতাংশ জিডিপিতে কর-টু-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্ন অনুপাতের একটি।

কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও রাজস্ব আহরণে উন্নতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি কর অব্যাহতি যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো যেতে পারে।'

রাজস্ব খাতে আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা না থাকলে তা সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোর প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।

একইভাবে, আর্থিক খাত ঠিক না হলে বেসরকারি খাতের ঋণ দিতে একই সমস্যায় পড়বে সরকার।

সায়েহ বলেন, 'সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক খাতে ঋণ দিতে বাংলাদেশের আরও দক্ষ আর্থিক খাত প্রয়োজন।'

সায়েহ জানান, ব্যাংকিংখাতে, বিশেষত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্বলতা করোনা মহামারির পর আরও বেড়ে গেছে।

তিনি জানান, খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে খুবই সতর্ক হতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ খাতে সংস্কার অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে স্বাধীন পরিচালকদের ভূমিকাসহ ব্যাংকের করপোরেট শাসন শক্তিশালী করা, পুনর্নির্ধারিত ও খেলাপি ঋণ ব্যাসেল মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রেণীকরণ করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমান কাঠামোর শক্তিশালী প্রয়োগ।

দেরিতে ঋণ পরিশোধের অনুমতি দেয় এমন আইনে নজর দেওয়া উচিত এবং ঋণদাতাদের অধিকারের শক্তিশালী প্রয়োগ ও ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনায় সমর্থন দিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ঋণ ও নিয়ন্ত্রিত সুদের হার পর্যালোচনায় আর্থিক নীতিতে সংস্কার ব্যাংকিংখাতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে বন্ড মার্কেটের আরও উন্নয়নও অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, বিশেষ করে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত মর্যাদা থেকে উন্নীত হওয়ার পর।

ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট সিস্টেমের আরও সংস্কার ও সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি মার্কেট গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়া প্রত্যাহার করতে হবে বলে যোগ করেন সায়েহ।

তিনি বলেন, 'যদি জ্বালানির দাম দেখেন, যারা গাড়ি চালায়, যাদের এয়ার কন্ডিশনার আছে, তারাই এই ভর্তুকি থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন।'

বর্তমানে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভর্তুকিতে ব্যয় করা হয় এবং সেই ভর্তুকির মধ্যে কিছু অংশ দরিদ্রদের উপকারে আসছে না।

'সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয়ের জন্য এই ভর্তুকি কমানো, দরিদ্রদের ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কমাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্রদের উপকারে আসে এমন খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে।'

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচীর লক্ষ্য হলো, আরও বেশি আর্থিক সংস্থান তৈরি করা এবং স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা মোকাবিলা ও দরিদ্রদের আরও ভালো সেবা দিতে সরকারের সক্ষমতা বাড়ানো।

এই ঋণ কর্মসূচী আর্থিক নীতি কাঠামোর আধুনিকীকরণের ওপরও জোর দিচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য আইএমএফের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ায় এই বছরটি কঠিন হতে চলেছে। তাই বাংলাদেশের মতো একটি উন্মুক্ত অর্থনীতির দেশের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা অপরিহার্য।

সায়েহ বলেন, 'এটি এমন একটি বছর, যা গত ১০ বছর বা তারচেয়েও বেশি সমেয়ের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা নতুন।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশেরও জলবায়ু বিষয়ক লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

(সংক্ষেপিত)

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago