মিনিটে ২০৮ বার ফুটবলে টোকা, গিনেস রেকর্ডে বান্দরবানের প্রেনচ্যং ম্রো

প্রেনচ্যং ম্রো
ফুটবলকে শূন্যে ভাসিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে মিনিটে সর্বোচ্চ ২০৮ বার স্পর্শ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়া প্রেনচ্যং ম্রো। ছবি: সংগৃহীত

ফুটবলকে শূন্যে ভাসিয়ে পায়ের পাতা দিয়ে মিনিটে সর্বোচ্চ ২০৮ বার স্পর্শ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন বান্দরবানে দুর্গম চিম্বুক পাহাড়ের বাসিন্দা প্রেনচ্যং ম্রো।

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অফিস থেকে পাঠানো একটি সনদ গত ১৮ জানুয়ারি বান্দরবানে সুয়ালকে তার বাসায় এসে পৌঁছেছে।

প্রেনচ্যং ম্রো বান্দরবান সদরের ৪ নং সুয়ালক ইউনিয়নের চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে লামাপাড়ার মৃত পিয়াচ্যং ম্রোর ছেলে। 

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ঘটনা সম্ভবত আমাদের পাহাড়িদের থেকে এখন পর্যন্ত কারও নেই। এই রেকর্ডটা অনুপ্রেরণা হবে পরবর্তী আরেকটা নতুন রেকর্ড ভাঙার জন্য

প্রেনচ্যং ম্রো

বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড়।

প্রেনচ্যং ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোটবেলা কেটেছে চিম্বুক পাহাড়ে। সেখানে মাঠের কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পরিচালিত বান্দরবানের ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৪-০৫ সালে ভর্তি হই। সেখানেই খেলাধুলা ও ফুটবলের হাতেখড়ি।' 

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, '২০২২ সালের শুরুর দিকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী বাংলাদেশি কনক কর্মকারের ভিডিও দেখি। তারপর ভাবলাম আমিও চেষ্টা করে দেখি। প্রথমে সহজ ক্যাটাগরি থেকে একটা বেছে নিলাম যেটি হলো Most football (Soccer) Toe Taps in One Mins।'

'ফুটবলার হিসেবে এই রেকর্ডটা কঠিন ছিল না। টুকটাক ফুটবল ফ্রিস্টাইল করতে পছন্দ করতাম আর ভিডিও তৈরি করে নিজের পেজে পোস্ট করতাম। পরে এক পর্যায়ে ২ দিন প্র‍্যাকটিস করে ভিডিও বানিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আবেদন করলাম। এক মাস পর গিনেস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ সাড়া দিলো,' বলেন তিনি।

প্রেনচ্যং ম্রো বলেন, '২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল রেকর্ড অ্যাটেম্প করি। এক মাস পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করি। ওই ভিডিও তৈরির পর আরও অন্য রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করেছিলাম।
২ নভেম্বর গিনেস থেকে আমাকে মেইল পাঠায় যে তারা এটি অ্যাপ্রুভ করেছে। তবে সনদ দিতে সময় লাগবে।'

'আমি যখন রেকর্ডটা ব্রেক করার চেষ্টা করছিলাম তখন রেকর্ড ছিল কুমিল্লার কনক কর্মকারের। তিনি ১ মিনিটে ১৯৭ বার ফুটবল স্পর্শ করেছিলেন। এর মাঝে ঢাকার মুনাকিমুল ২০৭ বার করে ফেলেছিলেন,' বলেন তিনি।

'আমি সবসময় এমন কিছু করতে চেয়েছি যেটা আমার ও আমার জাতির জন্য নতুন কিছু হবে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ঘটনা সম্ভবত আমাদের পাহাড়িদের থেকে এখন পর্যন্ত কারও নেই। এই রেকর্ডটা অনুপ্রেরণা হবে পরবর্তী আরেকটা নতুন রেকর্ড ভাঙার জন্য,' যোগ করেন প্রেনচ্যং ম্রো।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেনচ্যুং বলেন, 'আমার বাবা-মা জুমচাষ করতেন। আমরা ২ ভাই ও তিন বোন। আমি সবার ছোট। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার সময় ব্রেইনস্ট্রোক হয়ে মা প্যারালাইজড হয়ে যান। এরপর থেকে অভাবে দিন কাটে আমাদের। এমনও দিন গেছে ফুটবল খেলে আমাকে সংসারের খরচ চালাতে হয়েছে।'

'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই লেংঙি ম্রো আমাকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। তার প্রচেষ্টায় আর কঠোর পরিশ্রমের পর ফুটবল ইভেন্টে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সাইন্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই।' 

তিনি বলেন, 'বাবাকে সংবাদটা জানালে তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। মায়ের সেবাযত্ন করতে করতে মানসিক চাপে এক সময় ব্রেইনস্ট্রোক হয়ে বাবা মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার ৪ মাস পর মাও মারা যান।'

বর্তমান খেলাধুলার অবস্থা জানতে চাইলে প্রেনচ্যং ম্রো বলেন, '২০২০-২১ মৌসুমে ফর্টিস এসসির হয়ে ঢাকায় প্রথমবারের মতো বিসিএল খেলি। সেখানে ভালো কিছু করতে পারিনি। ২০২১ মৌসুমে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগ খেলা শুরু করি। সে বছর ব্রাদার্স ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন হয়। পাশাপাশি জেলা টিম ও বিশ্ববিদ্যালয় টিমে খেলছি।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its Standing Committee Member Salahuddin Ahmed, will file the complaint

53m ago