ক্রমবর্ধমান খরচে উদ্বিগ্ন উত্তরের ১৬ জেলার বোরো চাষি

ধান বিক্রির সময় বাড়তি খরচ করা টাকা উঠে আসবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক। প্রতীকী ছবি। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সাইফুল ইসলাম তার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, তিনি ধারণা করছেন, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় গত মৌসুমে চেয়ে এবার তাকে অন্তত ২৫ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হবে।

ধান বিক্রির সময় এই বাড়তি খরচ উঠে আসবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রংপুরের কৃষক।

টিলার মেশিন ও পানির পাম্প, সার, কীটনাশক, বীজ, শ্রমিকসহ সবকিছুর জন্য এখন প্রতি বিঘা জমির জন্য প্রায় ১৯ হাজার ৯০০ টাকা খরচ হবে। গত বছর যে খরচ ছিল ১৪ হাজার ৯০০ টাকা।

সাইফুল বলেন, 'এবারের বাড়তি খরচ আমার জন্য বিরাট বোঝা। গত বছরই তো খুব একটা লাভ করতে পারিনি।'

যারা অন্যের জমিতে চাষ করেন, তাদের জন্য এবার বোরো চাষ করে লাভ করা আরও কঠিন হবে বলে যোগ করেন তিনি।

সাইফুলের মতো উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার লক্ষাধিক চাষির বোরো ধান চাষের খরচ অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।

অনেকে আশঙ্কা করছেন যে সামনে খরচ আরও বাড়তে পারে।

দেশের বার্ষিক ধান উৎপাদনের ৫৪ শতাংশই বোরো থেকে আসে জানিয়েছে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এ বছর বোরোর ভালো ফলন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই বাড়তি খরচ কৃষককে নগদ সহায়তা হিসেবে দেওয়া।'

'নগদ প্রণোদনা পেলে কৃষক আরও বেশি জমিতে ধান চাষে উৎসাহিত হবে', যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, 'খেতে চাষ ও সেচ দিতে কৃষকের ডিজেল দরকার। সরকার ভর্তুকি না দিলে বোরোর দাম বাড়বে।'

তিনি বলেন, 'গত বছর আমন উৎপাদন ভালো হলেও চালের দাম কমেনি। মজুতদাররা আগামীতে চালের দাম আরও বাড়বে বলে অপেক্ষায় আছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বোরো ধানের গড় উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি বিঘায় ১৪ হাজার ৯০০ টাকা এবং রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে ছিল ১৭ হাজার ৪৫০ টাকা। প্রতিটি অঞ্চল ৪টি জেলা নিয়ে গঠিত।

অধিদপ্তরের অনুমান, এ বছর উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ১৩ দশমিক ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। যা দেশের মোট বোরো চাষযোগ্য জমির ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কৃষক কাঞ্চি কর্মকার বলেন, 'সরকার ডিজেল ও সারের দাম বাড়ানোর পর থেকে কৃষিকাজের সবকিছুর খরচ বেড়েছে।'

গত বছর, ডিজেলের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২ টাকা।

রংপুরের টেকিয়ারপাড় এলাকার শামসুল হক জানান, এক বিঘা জমি তৈরি করতে গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়ে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা হয়েছে, চারা বপনে খরচ ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে, সেচ বাবদ খরচ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে, সার বাবদ খরচ ২ হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হয়েছে, কীটনাশক ও অন্যান্য খরচ ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।

নওগাঁর এক কৃষক বলেন, 'এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৬ হাজার টাকা লাভ করাও কঠিন হবে। তারপরও সবকিছু নির্ভর করছে আবহাওয়াসহ আরও অনেক কিছুর উপর।'

রংপুরের জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাক্কানী বলেন, 'অধিকাংশ সুবিধাবঞ্চিত কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তাদের বেশিরভাগই স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ নিতে পারেন না। ফলে তাদেরকে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। সরকারের উচিত এই কৃষকদের নগদ সহায়তা দেওয়া।'

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, 'কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ালে খরচ কমানো যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Pathways to a new political order

Pathways to a new political order

The prospects for change are not without hope in Bangladesh.

9h ago