মিশরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শনার্থীরা । ছবি: সংগৃহীত

মিশরে বসেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলার আসর। রাজধানীর নিউ কায়রোর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ৫৪ তম 'কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা'।

১৯৬৯ সালে কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১ হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে আরব বিশ্বের প্রাচীন এ আন্তর্জাতিক বইমেলার শুরু হয়। কালক্রমে এর পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্তমানে কোনো কোনো সমীক্ষায় একে ফ্রাঙ্কফুট বই মেলার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই মেলার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৭ জন প্রকাশক। এর মধ্যে ৭০৮ জন মিশরীয় এবং ৩৪০ জন বিদেশি প্রকাশনা সংস্থা।‌ মেলায় ইরিত্রিয়া, ভারত, ঘানা, কুয়েত, মরক্কো, আফ্রিকান পাবলিশার্স নেটওয়ার্ক, কুয়েতি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টার এবং আমিরাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ এর সঙ্গে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করলো হাঙ্গেরি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক।

মিশরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার অতিথি দেশ কিংডম অব জর্ডান।

৪৫ হাজার বর্গমিটার আয়তনের দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত বই মেলার সুবিন্যাস্ত স্টলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরকাড়া প্যাভিলিয়ন।

প্রতিদিন চলছে দেশ বিদেশের প্রখ্যাত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সভা, সেমিনার, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানান বর্ণাঢ্য আয়োজন।

শুরুর দিন থেকে মিশর ছাড়াও বিভিন্ন দেশের অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন বইমেলায়। এর মধ্যে বইপ্রেমী অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও রয়েছেন। গতকাল শনিবার মেলায় আসা শিক্ষার্থী, কূটনীতিকসহ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আলাপে তাদের আগ্রহের কথা জানা যায়।

আজকাল বই পড়া মানুষের অভাব হলেও বইমেলার আয়োজন আনন্দের জন্য পড়তে উৎসাহিত করে উল্লেখ করে কায়রোর বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ইসমাইল হুসাইন বলেন, '২ বছর হয় আমি মিশরে এসেছি। এ প্রথম কায়রো বই মেলা দেখতে আসলাম। পছন্দমতো কিছু বই কিনবো। এখানে দেখলাম আরব জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বইয়ের প্রাধান্য বেশি।'

বাংলাদেশে আরবি বইয়ের অন্যতম বড় আমদানিকারক ঢাকার মাকতাবাতুল আযহার লাইব্রেরিরর স্বত্বাধিকারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আযহারী প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পছন্দ করে বই কিনতে এসেছেন কায়রো বই মেলায়।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে মিশর ও আরব দেশের বিভিন্ন সুনামধন্য লেখকদের আরবী কিতাবের যে সহজলভ্যতা দেখা যাচ্ছে এর অন্যতম উৎস হলো কায়রো বইমেলা। আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে বই সংগ্রহ করে দেশের কয়েক হাজার কওমী ও আলিয়া মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরবি বইয়ের চাহিদা পূরণ করে আসছে।'

'অর্থনৈতিক মন্দা ও কাগজের দাম আকাশ ছোঁয়ার কারণে এবার বইয়ের দাম প্রচুর বেড়েছে। সে হিসেবে দেশের পাঠকদের জন্যও আমাদের দাম বাড়াতে হবে,' বলেন তিনি।

আল-আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আম্মার হোসান মিমন বলেন, '২০১৯ সাল থেকে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম এ বইমেলায় নিয়মিত উপস্থিতি আমার। ডলারের রেট বাড়ার কারণে এবার বইয়ের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। তবে বই সংগ্রহের আগ্রহ কি আর টাকা দিয়ে মাপা যায়?'

'বরাবরে মতো মেলা আগে থেকেই টাকা জমিয়েছি, সামর্ধ্যের মধ্যে যে কয়টি সম্ভব কেনার চেষ্টা থাকবে,' তিনি বলেন।

মিমন জানান, এ বই মেলায় ইসলামিক বই থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাষার উপন্যাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, কবিতা এবং শিশুতোষ বই পাওয়া যায়।

প্রতি বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে বই মেলা।

লেখক: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Israel stands down alert after Iran missile launch

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

22h ago