চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে তৈরি গাড়ির টায়ার

চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে তৈরি গাড়ির টায়ার
চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে গাড়ির টায়ার তৈরি করেছে গুডইয়ার নামের একটি টায়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

গুডইয়ার নামের একটি টায়ার উৎপাদনকারী ব্র্যান্ড পরিবেশ সচেতনতা থেকে সয়াবিন তেল, চালের ভুসি এবং পাইনের রজন দিয়ে তৈরি করেছে যানবাহনের টায়ার। যার ৯০ শতাংশ উপাদানই পরিবেশবান্ধব। এই টায়ারটি রাস্তায় ব্যবহারের জন্যেও অনুমোদন পেয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে গতমাসে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম আলোচিত প্রযুক্তি-বিষয়ক শো কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো (সিইএস)-তে টায়ারটি প্রদর্শিত হয়।

নতুন এই টায়ারটি রাস্তায় চলাচলের জন্য সমস্ত রেগুলেটরি এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। টায়ারটি তৈরিতে সাধারণভাবে ব্যবহৃত যৌগগুলোর পরিবর্তে সয়াবিন তেল, চালের ভুসি এবং পাইন রজন-এর মতো পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে সিইএস-এ প্রদর্শিত টায়ারগুলো ব্যাপকভাবে বাজারে আনার আগে গুডইয়ারের এখনো কিছু প্রস্তুতি বাকি। কিন্তু কোম্পানিটি এই বছরই বাজারে ৭০ শতাংশ পরিবেশ বান্ধব উপাদানের টায়ার নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে।

গত কয়েক বছর ধরে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর কথা বিবেচনা করে, টায়ার নির্মাতাদের মধ্যে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব টায়ার উৎপাদনের চর্চা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে গুডইয়ার ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব টায়ার প্রবর্তনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। গত মাসের সিইএস-এ তাদের নতুন টায়ারটির প্রদর্শন মূলত সেই ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ারই বার্তা দিচ্ছে।

প্রদর্শিত টায়ারটি ইতোমধ্যেই রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সব রেগুলেশন এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও, টায়ারের কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই যথেষ্ট নয়। কারণ রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রচুর খারাপ টায়ারও অনুমোদিত হয়ে আছে। তবে প্রদর্শিত টায়ারটি অন্তত একটি পরিমাপকে এগিয়ে আছে, সেটি হচ্ছে এর রোলিং রেজিস্ট্যান্স। গুডইয়ার দাবি করে যে, তাদের এই টায়ার প্রথাগত উপকরণের তৈরি টায়ারের তুলনায় তুলনামূলক আরও সহজে রোল করে বা গড়াতে পারে।

প্রাকৃতিক রাবার ছাড়াও আধুনিক টায়ারগুলোকে ইস্পাত, টেক্সটাইল, সিন্থেটিক পলিমার এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগ উপকরণের রয়েছে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব।

টায়ার ক্ষয় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে এর টুকরোগুলো পরিবেশে পড়তে থাকে। যার মাধ্যমে সেগুলোর রাবার এবং রাসায়নিক পদার্থগুলো পরিবেশকে দূষিত করে। তবে গুডইয়ারের নতুন টায়ারটি তা করবে না। এটি এসব দূষণীয় পদার্থের পরিবর্তে রেখে যাবে 'টোফু'। 

টায়ার নির্মাতারা তাদের টায়ারের যৌগের রাসায়নিক গঠন প্রকাশ করতে না চাওয়ার জন্যে বেশ কুখ্যাত। তারা এই ব্যপারে কোনোভাবেই মুখ খুলতে চায় না। এই তথ্য লুকানোর ব্যপারে তারা এতটাই উদ্বিগ্ন যে, প্রায়শই তারা এর জন্য ট্রেডমার্ক ফাইল করা এড়িয়ে যায়। যাতে করে প্রতিযোগীরা তাদের এই তথ্য চুরি করতে না পারে। 

তবে গুডইয়ার তাদের টায়ার তৈরির পেছনে ব্যবহৃত মোট ১২টি উপাদান প্রকাশ করেছে। সেগুলো কোন কোন উৎস থেকে আসে তার উপর ভিত্তি করেও ১৭টি মূল উপাদান সম্পর্কে তারা জানিয়েছে। এই রেসিপিটিতে রয়েছে সয়াবিন তেল, যা পরিবর্তনশীল তাপমাত্রায় টায়ারকে নমনীয় রাখবে। ধানের তুষের ছাইয়ের সিলিকা, যা টায়ারকে উন্নত গ্রিপ প্রদান করবে। তারপরে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক রজনকে প্রতিস্থাপনকারী, পাইন রজন।

তবে গুডইয়ার স্বীকার করেছে যে এটি সিইএস-এ প্রদর্শিত টায়ারটি বাজারে আনার জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তবে এই বছরের শেষ নাগাদ কোম্পানিটি এমন একটি টায়ার বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে যার ৭০ শতাংশই পরিবেশ বান্ধব। 

 

তথ্যসূত্র: কার অ্যান্ড ড্রাইভার

 

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

13m ago