অনুভবের যৎসামান্য- ১৪

বিষাদের সেই সুর

জাতীয় সংগীত ছাড়া আর ক'টা সুর আছে পৃথিবীতে যা বেজে উঠলে পুরো জাতি একসঙ্গে সেই সুরে বাঁধা পড়ে যায়? পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন সুর আছে কি না আমার জানা নেই, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমাদের আছে। সেটি একুশের গানের সুর, 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'র সুর। একুশের প্রথম প্রহরে কিংবা অন্য কোনো সময় যখন এই সুরটি বেজে ওঠে, তখন শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ায়, স্তব্ধ হয়ে যায়, তাদের মুখমণ্ডল ছেয়ে যায় এক অদ্ভুত বিষাদে, তাদের মন একবারের জন্য হলেও কেঁদে ওঠে; এমনকি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানা না থাকলেও সুরটির কারুকার্য মানুষের মনকে এক অজানা বেদনাবোধে আক্রান্ত করে। 

এই বিষাদ ও বিষণ্ণতা ও বিপন্নতা ও বেদনাবোধ ব্যক্তিগত নয়, সামষ্টিক। আমরা তখন সবাই সবার হয়ে উঠি, কেবল নিজেরই থাকি না। আমরা বেদনাবোধ করি, বিষাদে আক্রান্ত হই অন্যদের কথা ভেবে, আমরা নিজেরা নিজেদের চেয়ে বড় হয়ে উঠি তখন।  কেন এই সুরটি এমন গভীরভাবে আক্রান্ত করে মানুষকে, তা লিখেছিলাম বছর বিশেক আগে, আমার 'সংশয়ীদের ঈশ্বর' প্রবন্ধে। সেটির পুনরুল্লেখ করা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না। 

শহীদ সংগীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি-  গানটি সুর করা। আমার মনে হয় - এদেশের মানুষের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারি এমন আদরণীয় হয়ে ওঠার পেছনে এই সুরটির অত্যন্ত গভীর প্রভাব আছে। এর কারণ হয়তো এই যে, এই সুরের মধ্যে দিয়ে এই জাতির অশ্রু ও রক্তপাত, বেদনা ও বিষণ্ণতা, বিষাদ ও বিপন্নতা মূর্ত হয়ে উঠেছে, আর আলতাফ মাহমুদ হয়তো সেটিই চেয়েছিলেন। বাঙালি জাতি স্মরণাতীত কাল থেকে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়ে এসেছে কিন্তু কোনোদিনই তেমন কোনো কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি বলে এক গভীর বেদনায় নিমজ্জিত হয়েছে। আলতাফ মাহমুদ একটি সুরের মধ্যে দিয়ে সেই বেদনা-দুঃখ-কষ্ট-কান্না এবং নিপীড়িত-নির্যাতিত হবার ইতিহাসকে মূর্ত করে তুলতে চেয়েছিলেন, এবং বলাবাহুল্য, তিনি সফল হয়েছেন। এই গানটির লিরিক কিন্তু তেমন শক্তিশালী বা হৃদয়স্পর্শী নয়। সত্যি বলতে কি, কথাগুলো যে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয় সেটি বোঝা যায় এই ঘটনা থেকে যে, আলতাফ মাহমুদ সুর করার আগে গানটি আবদুল লতিফের সুরে প্রায় এক যুগ ধরে গীত হয়েছে, কিন্তু মানুষের মনে সেটি তেমন কোনো অভিঘাত তৈরি করতে পারেনি। আন্দাজ করা  যায় - আবদুল লতিফের সুরে আলতাফ মাহমুদ সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং তিনি নিজেই এটিতে সুর করার কথা ভেবেছিলেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে - এই গানটি রচিত হবার এবং প্রথমবার সুর হয়ে যাবার পর তিনি নতুন করে সুর করতে এক যুগেরও বেশি সময় নিয়েছিলেন। একটি জাতিকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলার মতো সুর তো  সহসা পাওয়া যায় না - তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সাধনা করতে হয় - এক যুগ ধরে হয়তো তিনি সেটিই করছিলেন এবং অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সুরটি তাঁকে ধরা দেয়।

আলতাফ মাহমুদ তার কাজটি যথার্থভাবে করেছিলেন আর সুরটিকে জনমানসে স্থায়ীভাবে গেঁথে দেবার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন জহির রায়হান। তিনি তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া'-তে এই সুরটির সার্থক ব্যবহার করেছিলেন। সেই শুভ্র পোশাক পরে নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি, সেই মৃদুকণ্ঠের করুণ গান – আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো - কার না কানে বাজে এখনো? তখন চলচ্চিত্র ছিল দারুণ এক শক্তিশালী মাধ্যম - আমরা আরো অনেককিছুর মতো চলচ্চিত্রকেও এদেশে ধসিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি, সেজন্য এর শক্তিমত্তার দিকটি এখন আর বুঝতে পারি না -  জহির রায়হান সেই মাধ্যমটিকেই কাজে লাগিয়েছিলেন। আলতাফ মাহমুদ আর জহির রায়হান, বাঙালি জাতির দুই ক্ষণজন্মা প্রতিভা মিলে একুশের গানটিকে আক্ষরিক অর্থেই এ দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। যদিও সময়টি ছিল পাকিস্তানি শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট, জেনারেল আইয়ুব খানের দোর্দণ্ড প্রতাপে দিশেহারা, তবু তাঁরা পিছপা হননি। 

স্বাধীনতার আগেই একুশের ভোরে প্রভাতফেরি আর দিনমান একুশের গানের সুর আমাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল। ছোটবেলায় আমি নিজেও দেখেছি সেসব। তারপর কবে থেকে যেন একটু একটু করে বদলাতে লাগলো সব। ছোটবেলার সব স্মৃতিই যে মনে আছে তা নয়। তবে প্রভাতফেরির কথা খুব মনে পড়ে। খুব ভোরবেলায় খালি পায়ে বাসা থেকে বেরুতাম। বেশ শীত থাকতো ওই সময় - তখন বোধ হয় শীতের প্রকোপ একটু বেশিই ছিল-  পা জমে আসতো, তবু জুতা পরতাম না। শহীদ মিনারের কাছাকাছি গেলে দেখা যেত বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষের দীর্ঘ সুশৃঙ্খল সারি। ব্যানার হাতে একদল মানুষ ফুলের তোড়া নিয়ে আসছে-  এরকম দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়তো বলে মনে পড়ে না, তবে যারা আসতেন সবার হাতেই একটা-দুটো-চারটে ফুল থাকতো, এবং সবার পা-ই খালি থাকতো। সবাই বাসা থেকে খালি পায়েই বেরোতেন কি না ভেবে দেখিনি কখনো, কেউ জুতা/স্যান্ডেল পরে বেরোলেও শহীদ মিনারের কাছে এসে সেগুলো খুলে কোথায় রাখতেন তাও জানি না। এখন তো কেবল বেদিতে জুতা  পরে ওঠা নিষেধ, কিন্তু বাকি অংশ জুড়ে সবার পায়েই তো জুতা দেখি।  খুব ভোরের ওই নগ্ন-পদযাত্রা, গুনগুন করে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গাওয়া আর ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ এক অপ্রকাশযোগ্য অনুভূতি তৈরি করতো। প্রভাতেফরি পাল্টে গিয়ে কবে থেকে মধ্যরাতে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রথা চালু হলো-  মনে নেই। 

তবে প্রচুর ব্যানার, প্রচুর ফুলের তোড়া, প্রচুর মানুষ - এগুলো খুব বেশিদিনের কথা নয় বোধ হয়। ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নিবেদনের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক/সাংগঠনিক শ্রদ্ধা নিবেদন কি অধিকতর দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠছে দিনে দিনে? নইলে এত ব্যানার চোখে পড়ে কেন? খারাপ বলছি না ব্যাপারটাকে, কিন্তু সেই ছোটবেলার পবিত্র অনুভূতিটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে এত এত আনুষ্ঠানিকতায়, এইসব মনে হয় আজকাল!

কিন্তু এবার, এই ২০২৩ সালে এসে মনে হলো, একুশে ফেব্রুয়ারিতে যেন একুশের সুরটিই অনুপস্থিত হয়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, এ আমারই ভুল। এর কারণও আছে। আমি যে এলাকায় এখন থাকি, সেই এলাকায় ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই একটানা বঙ্গবন্ধুর ৭-মার্চের ভাষণ বাজানো হচ্ছিল, মাঝে মাঝে গান – 'যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই' কিংবা 'এক নদী রক্ত রক্ত পেরিয়ে', তারপর ফের ভাষণ। এগুলো যে বাজানো যাবে না তা তো নয়, কিন্তু সাধারণত স্বাধীনতা দিবসে বা বিজয় দিবসে এসব বেশি বাজানো হয়। তবু, মনে হচ্ছিল, একুশ আর স্বাধীনতা তো পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়, একটির ধারাবাহিকতায় আরেকটি এসেছে, বঙ্গবন্ধুও মিশে আছেন বাংলাদেশের প্রতিটি ধূলিকণায়, সেজন্যই বাজানো হচ্ছে তাঁর ভাষণ আর স্বাধীনতার গান, একুশের প্রথম প্রহরে নিশ্চয়ই বেজে উঠবে সেই সুর যার জন্য উৎকর্ণ হয়ে আছি। কিন্তু রাত বারোটা, মানে একুশের প্রথম প্রহর, পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা ক্রমাগত এগোতে লাগলো, একুশের সুর আর বাজলো না। কিন্তু তখনও বেজে চলেছে ভাষণ। এমনকি পরদিন সকালে, মানে একুশ তারিখ সকালে, যখন ঘুম ভাঙলো তখনও সেই একই ব্যাপার। ভাষণ আর ''যদি রাত পোহালেই শোনা যেত' বেজে চলেছে। সারাদিন ধরেই বাজলো। অথচ একবারও একুশের সুর বাজলো না কোথাও। হতভম্ব হয়ে গেলাম। 

বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণটি তো কেবল সাধারণ একটি ভাষণই নয়, এই জাতির স্বাধীনতার মহাকাব্য রচিত হয়েছিল সেখানে। নিজে নিজেই কতবার যে শুনেছি ওই ভাষণ। এমনকি এখনো, যদি কোনো জাতীয় বিপর্যয়ে মুষড়ে পড়ি, তখন ওই ভাষণ শুনলে ফের উজ্জীবিত হয়ে উঠি। মনে হয়, জেগে ওঠার সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু তাই বলে একুশের রাতে এবং দিনেও চারপাশ প্রকম্পিত করে একটানা বাজিয়ে যেতে হবে ওই ভাষণ? একটা প্রশ্ন এলো মনে, যারা সন্ধ্যা থেকে একটানা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাচ্ছেন, মাইক লাগিয়ে অন্তত কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সমস্ত মানুষের মাথা ধরিয়ে দিচ্ছেন, তারা কি সত্যিই ভালোবাসেন বঙ্গবন্ধুকে? নাকি মানুষকে বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গিয়ে প্রকারান্তরে এই ভাষণটিকেই অপ্রিয় তুলবার কাজটি সূক্ষ্মভাবে করে যাচ্ছেন? কিন্তু এ প্রশ্ন আমি কাকে করবো?  

একুশের সুর যে এবার শোনা যাচ্ছে না, সে-কথা লিখেছিলাম ফেসবুকে। কিন্তু কথাটা যে কেবল আমারই মনে হচ্ছে না, তা বোঝা গেল শহীদ সংগীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ যখন ফেসবুকে লিখলেন : 'এবার একুশের মতন এতো সুরহীন একুশ এই জীবনে দেখিনি। ভাষার মাসের প্রথমদিন থেকে একুশের গানের সুর শোনা যেতো বেশীর ভাগ টিভি চ্যানেলে। রাতে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বেজে উঠতো একুশের গান, বারবার, সারারাত ধরে। এখন শুধুই দিবস হয়ে গেছে একুশ। সে দিবসেও একুশের গানের সুর কমে গেছে।'

শাওন মাহমুদ এবং আমার পোস্টে অনেকে মন্তব্য করে জানালেন, তাদের অভিজ্ঞতাও একই। মানে, একুশের সুর তারাও শুনতে পাচ্ছেন না এবার। বিবিধ ধরনের মন্তব্য এলো। কেউ বললেন, কর্পোরেট সংস্কৃতি এই দিনটিকেও স্রেফ এক আনন্দ-উৎসবের দিনে পরিণত করেছে। কেউ বা বললেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পরই এর ভাবগাম্ভীর্য এবং আবহ পাল্টে গেছে। আমি এই মতের সঙ্গে পুরোপুরি সায় দিতে পারলাম না। জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ১৯৯৯ সালে, কিন্তু এবার যে পরিবর্তন দেখলাম তা একেবারেই সাম্প্রতিক। হ্যাঁ, দিনটি কেবল শোক ও শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয় না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হয় ২০০০ সাল থেকেই। কিন্তু একুশের যে আবহ এবং ভাবগাম্ভীর্য তা অটুট ছিল আরো অনেক বছর। তবে হ্যাঁ, এই পরিবর্তনের পেছনে কর্পোরেট পুঁজির একটা ভূমিকা আছে। কর্পোরেট পুঁজি ব্যবসা বোঝে, অন্য কিছু নয়। ফলে একে কীভাবে রঙিন করে তোলা যায়, আনন্দময় উদযাপনের উপলক্ষ করে তোলা যায় সে চেষ্টা তারা করেছে এবং সফল হয়েছে। 

ব্যাপারটা কীভাবে ঘটেছে, তার উদাহরণ হিসেবে শিল্পী রফি হকের একটা লেখার উল্লেখ করা যেতে পারে। একুশ তারিখে তিনিও সুর না শোনার বেদনা প্রকাশ করেছেন লেখাটিতে : প্রতি বছর ভোরে অপেক্ষা করি একুশে ফেব্রুয়ারি গানটির ওই সুর মূর্ছনার শিহরণটির জন্যে । আমি অবাক হলাম আজ এখন পর্যন্ত অনন্ত উদাস বাতাসের ভেতর দিয়ে অমর একুশের গানের সেই সুর ভেসে আসেনি! এখন বেলা পড়ে গেছে, সূর্য হেলে গেছে, আর কখন শুনবো সেই সুর ?

সেই সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন তিনি। সেটি হলো শহীদ মিনারের আলপনা। আসুন তার লেখা থেকেই কিছু অংশ পড়ি : আর্ট কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্ররা তখন শিল্পী হাশেম খানের নেতৃত্বে শহীদ বেদীতে আলপনা আঁকত । আমি হাশেম স্যারের সঙ্গে সেবার আলপনা আঁকছি সে-কি উত্তেজনা! কলকাতা থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক এসেছেন, ফটো-জার্নালিস্ট এসেছেন । মনে পড়ে গেল, আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় হাশেম স্যার আর আমার ছবি ছাপা হয়েছিল । 

আনন্দবাজারের সাংবাদিক স্যারকে একুশে ফেব্রুয়ারি ও আলপনা নিয়ে কিছু বলতে অনুরোধ করলেন। …হাশেম খান স্যার বললেন : "অন্তরের সৌন্দর্যবোধ থেকে আলপনা জাগ্রত হয়, এ নান্দনিকতার সাধনা। এ এমন এক আলঙ্কারিক উদ্দীপনা যার ব্যাপ্তি অসীম, অনন্ত। আলপনা পবিত্রতার অনুষঙ্গ। আমাদের ভাষা শহীদের পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্যে এ আলপনার নিবেদন। পবিত্রতার অনুষঙ্গ বলেই আলপনা শুধু শাদা রঙে আঁকা হয়।"

হ্যাঁ, তখন শুধুই শাদা রঙে আলপনা আঁকা হতো। কী যে পবিত্র লাগত! বহু রঙ দিয়ে আলপনা আঁকার প্রবণতা শুরু হলো যখন এদেশের কালার কোম্পানিগুলো রঙ স্পন্সর করতে শুরু করল । বিশ্বাস করুন, অন্যদের কথা জানি না, আমি এই রঙ-বেরঙের আলপনা দিকে এখন তাকাতে পারি না। কী যে অশ্লীল আর নোংরা লাগে । পবিত্রতার দর্শনটিই বহু রঙের প্রলেপে ঢেকে দেয়া হয়েছে এখন । '

বুঝতেই পারছেন প্রিয় পাঠক, রঙের ব্যবসায়ীরা যখন স্পন্সর হিসেবে আবির্ভূত হলো , তখন কীভাবে বদলে গেল আলপনার রঙ! এখন আমরা হাশেম খানের মতো শিল্পীই বা পাবো কোথায় যিনি তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলপনা করবেন আর বর্ণনা করবেন সাদা রঙের আলপনার মাহাত্ম্য?

শুধু কি কর্পোরেটের দায়? রাজনীতিও কি নেই? নইলে কেনই বা দিনভর বাজবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ? যারা বাজাচ্ছে তারা কি জানে না, একুশের সুর কোনটা? একবারের জন্যও কি তাদের মনে হলো না, সুরটি বাজানো দরকার? মুক্তিযুদ্ধকে তারা ইতিমধ্যেই এক পরিবারের যুদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। যেন তিরিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ দেয়নি, যেন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেননি, যেন মা-বোনরা সম্ভ্রম হারাননি। একুশেও কি তারা এক ব্যক্তির অর্জন হিসেবে দেখাতে চায়? আমাদের আলপনা চুরি হয়ে গেছে, সুর চুরি হয়ে যাচ্ছে, ইতিহাসের অন্য সবকিছুও কি এভাবেই চুরি হয়ে যাবে? আমরা হতে দেবো? 

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

38m ago