১৫ শকুন বসতি গড়েছে গ্রামটিতে

ছবি: সংগৃহীত

শকুন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশ থেকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে কমতে কমতে শকুনের সংখ্যা এখন শতের ঘরে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশে বিষের প্রভাব আর খাদ্য সংকটে বিপন্ন এ প্রাণীটির দেখা এখন পাওয়া যায় সুন্দরবন আর সিলেটের বনাঞ্চলে।তবে এবার পাবনার বেড়া উপজেলার মোল্লাপাড়ার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় শকুনের আবাসস্থলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

১টি-২টি নয়, প্রায় ১৫টি বিপন্ন হোয়াইট-রামপড প্রজাতির শকুন মোল্লাপাড়ার বিভিন্ন জনের বাড়ির উঁচু গাছে গড়ে তুলেছে আবাসস্থল।। প্রায় ৩ দশক ধরেই এ গ্রামে শকুনের বসবাস। স্থানীয়ভাবে এগুলো বাংলা শকুন নামে পরিচিত।

স্থানীয়রা জানান, খাদ্যের যোগান না থাকায় শকুনগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে খাদ্যের সন্ধানে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসে তাদের আবাসস্থলে। মোল্লাপাড়ার কলেজ শিক্ষক আব্দুল মালেক ও আজগর আলীর বাড়ির নারকেল গাছ, দেবদারু গাছ, তেঁতুল গাছসহ গ্রামের বেশ কয়েকটি গাছে তাদের আবাস।

গ্রামবাসী আজগর আলী জানান, গত প্রায় ৩ দশক ধরেই এ গ্রামের বিভিন্ন গাছে শকুনের বসবাস। খাদ্যের সন্ধানে ভোর থেকেই ছুটে বেড়ায় এগুলো। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসে নিজেদের ঘরে। গ্রামবাসীরা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও এখন গুরুত্ব বুঝতে শিখেছে।

আজগর জানান, নারকেল গাছের ডাল কাটতে গিয়ে শকুনের বাসা দেখে গাছ কাটা বন্ধ রেখেছেন তিনি।  

তিনি আরও জানান, শকুন বংশ বিস্তারের জন্য বাচ্চা ফোটালেও বেশিরভাগ সময় বাসা থেকে শকুনের বাচ্চা পড়ে মারা যায়।

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শকুনের আবাসস্থলের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এগুলোকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে প্রাণীগুলো।

গাজীপুরের শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ও পাখিবিদ আল্লামা শিবলি সাদিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শকুন নির্জন স্থানে বসবাস করলেও পাবনার বেড়া উপজেলায় এই প্রথম লোকালয়ে শকুনের আবাসস্থলের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিপন্ন এ প্রাণীটি রক্ষায় ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।'

ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, 'দেশে একসময় ৭ প্রজাতির শকুনের বসতি থাকলেও কালের বিবর্তনে এখন তা বিলুপ্তির পথে। বেড়ায় যে শকুনগুলো দীর্ঘদিন বসবাস করছে তা বিপন্ন হোয়াইট-রামপড প্রজাতির বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২০১৫ সালের জরিপে এ প্রজাতির ২৫০টির মত শকুনের সন্ধান পাওয়া গেলেও তা এখন অনেক কমে গেছে।'

'বেড়ায় একসময় আরও অনেক বেশি সংখ্যক শকুনের বসবাস থাকলেও গত কয়েক বছরে বেশ কিছু শকুন মারা গেছে। ফলে এ সংখ্যা অনেক কমে গেছে', যোগ করেন তিনি।

আল্লামা শিবলি সাদিক আরও বলেন, 'শকুনের নিরাপদ বসতি ও পর্যাপ্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা না থাকায় জন্মের পর অনেক শকুনের বাচ্চা মারা যাচ্ছে। দ্রুত এ অঞ্চলকে শকুনের নিরাপদ কলোনি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।'

পাবনার বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাশ্যপ বিকাশ চন্দ্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন ,'ইতোমধ্যে দেশের সুন্দরবন ও সিলেট অঞ্চলে শকুনের কলোনি গড়ে উঠেছে। কিন্তু পাবনার বেড়া জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে নিরাপদ কলোনি গড়ে তুলতে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শকুন আশির দশকের পর থেকে খাদ্যের সংকট আর পরিবেশে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিলুপ্ত হতে থাকে। এখন দেশে এ প্রাণীটির সংখ্যা শতের ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে।'

'বেড়ায় প্রাণীটি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিতে বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে পরিদর্শনে আসবেন। জনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় শকুনের নিরাপদ বসতির নিশ্চয়তা দিতে এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে', যোগ করেন কাশ্যপ বিকাশ চন্দ্র।

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

52m ago