সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ

‘আমাদের ব্লেম করবেন না, এটা নিছক দুর্ঘটনা-অন্য কিছু না’

সীমা
সীমা রি-রোলিং মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে গত ৪ মার্চ বিস্ফোরণ হয়। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন বলেছেন, এটা নিছক দুর্ঘটনা-অন্য কিছু না।

তার দাবি, কারখানার কোনো ত্রুটি ছিল না। সব নথি হালনাগাদ করা ছিল। আজ রোববার দুপুরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে নাজিম উদ্দিন দাবি করেন, 'দুর্ঘটনার পরে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি; প্রশাসনের এই অভিযোগও সত্যি না। এখনো আমাদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। আমি নিজেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। এখানে আহত শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এখান থেকে ঘটনাস্থলে যাব।'

তবে ঘটনাস্থল থেকে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে মালিকপক্ষের কাউকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, 'নিহত এবং আহত সবাই আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। উৎপাদনের সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ব্লেম করবেন না, এটা নিছক দুর্ঘটনা-অন্য কিছু না।'

দুর্ঘটনার পরে মালিকপক্ষ কোথায় ছিল জানতে চাইলে নাজিম বলেন, 'আমাদের কর্মীরা আহতদের নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যস্ত ছিল। আমরাই মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করছিলাম। যে কারণে দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল আহতদের প্রাণ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং আমরা সেটা করেছি।'

পারভেজ উদ্দিন সান্টু সীমা স্টিল রি-রোলিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্থানীয় বাসিন্দা ও সূত্র নিশ্চিত করেছে, তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে জড়িত। সান্তু ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

নাজিম উদ্দিন সান্টুর চাচাতো ভাই।

সীমা অক্সিজেন লিমিটেড সীমা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। সীমা গ্রুপ একটি মাঝারি ধরনের ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। গ্রুপের আওতায় আরও রয়েছে জাহাজ ভাঙার কারখানা ও স্টিল রি-রোলিং মিল। সান্টুর বাবা প্রয়াত মো. শফি সীমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন তার সন্তানরা এই গ্রুপ পরিচালনা করেন।

গত রাতে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, কিছু সিলিন্ডারের ব্লাস্টিং ক্যাপাসিটি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদনকালে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।

সীমা স্টিলের মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের ব্যবস্থাপক আরিফ সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহা কাটার জন্য অক্সিজেন প্ল্যান্টে আমরা প্রাকৃতিক বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করে শিল্প অক্সিজেন তৈরি করতাম। সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামে এই কারখানার কাছে আমাদের আরেকটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে। আমাদের একটি স্টিল মিল এবং দুটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে।'

তার দাবি, 'আমাদের বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স এবং অন্যান্য কাগজপত্র ও নথিপত্র সম্পূর্ণ ঠিক আছে এবং আমরা গত রাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কারখানার ভেতরে আমাদের অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ছিল।'

সীমা স্টিলের পরিবহন কর্মকর্তা শামীম আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রাত ৯টার দিকে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।'

গত রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, কারখানায় প্রতিদিন বিভিন্ন ক্ষমতার ৪-৫টি ট্রাক সিলিন্ডার লোড ও আনলোড করা হতো। দুটি পৃথক অঞ্চলে চারটি প্ল্যান্ট রয়েছে। এখানে দুটি প্ল্যান্টের উত্পাদন আগে স্থগিত করা হয়েছিল। কারখানার প্রতিটি শিফটে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করতেন। সিলিন্ডারগুলো ৪টি পয়েন্টে রিফিল করা হতো এবং রিফিলের সময় প্রতিটি পয়েন্টে ৩ জন কর্মী কাজ করতেন।

একটি শিফট দুপুর ২টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় শিফট রাত ১০টায় শুরু হয়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলতো।

নাজিম উদ্দিন জানান, তারা আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন এবং নিহতদের আর্থিক সহায়তা করবেন।

বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

8h ago