পলিথিনে পা পুড়িয়ে মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, মা গ্রেপ্তার

মেয়ের পা পুড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে হোসনে আরা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

টাকার লোভে মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন মা। বেশি ভিক্ষার আশায় ও মানুষের সহানুভূতি পেতে মেয়ের পা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে পুড়িয়ে দিতেন তিনি।

চট্টগ্রামে আদালতের নির্দেশে মামলা করে ওই নারীকে গ্রেপ্তারের পর আজ সোমবার এসব কথা জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রোববার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার বদনাশাহ থানার সামনে থেকে হোসনে আরা বেগম (২৮) নামে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআই মেট্রো ইউনিটের অফিসাররা জানান, হোসনে আরা নিজের ১১ বছরের মেয়ের পা পুড়িয়ে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন। পরে এক বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা করেন।

পিবিআইএর তদন্তে মামলাটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধেই উল্টো মামলা করে পুলিশ।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলাতান জানান, মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে গত বছরের ২৭ মে আদালতে মামলা করেন হোসনে আরা। মামলায় তিনি রাশেদ ও লিমু নামে এক দম্পতির পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও কয়েক জনকে আসামি করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই হোসনে আরার কিশোরী মেয়েকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করে।

পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, উদ্ধার করা কিশোরী ২২ ধারায় দেওয়া তার জবানবন্দিতে আদালততে জানায়, পাঁচলাইশ বদনাশাহ মাজারের সামনে সে ভিক্ষা করত। তার পায়ে পলিথিন মুড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করত তার মা। পথচারীদের সমবেদনা ও বেশি ভিক্ষা পেতে তিনি এমনটা করতেন।

আদালতকে ওই কিশোরী আরও বলেছে, তার ছোট ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পা ভেঙে ফেলায় মামলার আসামি লিমু তার মাকে টাকা দিয়ে ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করেছিলেন এবং তাকে নিজেদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে লিমু ও তার স্বামীর বিরুদ্ধেই অপহরণের মামলা করেন তার মা।

পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিজের মেয়েকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়ানোর অভিযোগে হোসনে আরার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার জন্য পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পাঁচলাইশ থানায় মামলা করে হোসনে আরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ফুটপাথে থাকতেন আর নিজেরে মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন।

'মেয়ের ভিক্ষার টাকায় সংসার খরচের পাশাপাশি তিনি স্মার্টফোনে লুডু গেম খেলতেন,' বলেন তিনি।

পিবিআই পরিদর্শক মর্জিনা জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় হোসনে আরার ছোট ছেলের পা ভেঙে গিয়েছিল। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তিনি রাস্তায় কান্নাকাটি করতেন। ফারজানা আলী চৌধুরী লিমু নামে এক নারী তার অসহায়ত্বের কথা শুনে ছেলের চিকিৎসার জন্য কয়েক ধাপে ১০ হাজার টাকা দেন।

'সেই সঙ্গে ১১ বছরের মেয়েকে ভিক্ষা করতে না দিয়ে নিজের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে যান তিনি' বলেন তিনি।

পরিদর্শক মর্জিনা জানান, রুমুর বাসায় কিশোরী মেয়েটি থাকার সময় নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছেন। বেতনের টাকা মোবাইলে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।

কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তিতে আয় বেশি হওয়ায় হোসনে আরা তার মেয়েকে আবার একই কাজে নামানোর চেষ্টা করেন এবং টাকা হাতিয়ে নিতে লিমু ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

3h ago