অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ

অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা, অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ,
ইউনিভার্সিটি অব সিডনি। ছবি: রয়টার্স

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের দেওয়া 'অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস' শিক্ষাবৃত্তির জন্য এশিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে এই শিক্ষাবৃত্তি।

স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ বা অস্ট্রেলিয়া গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময়সীমা শেষ হবে আগামী ১ মে। প্রতিবছর আবেদনের সময়সীমা শুরু হয় ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে এবং শেষ হয় এপ্রিলের শেষে।

এক নজরে স্কলারশিপের সুবিধা

অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে শিক্ষার্থীর জন্য সম্পূর্ণ টিউশন ফি, স্টাইপেন্ড এবং কোর্স চলাকালীন স্বাস্থ্যবীমার সুযোগ। এছাড়া, এককালীন যাতায়াত খরচ, অর্থাৎ– বিমানের ইকোনমি ক্লাসে একবার অস্ট্রেলিয়া আসা-যাওয়ার খরচ, প্রাথমিকভাবে বাসস্থান ও  বই কেনার খরচ প্রদান করা হয়। কেউ চাইলে শিক্ষাবৃত্তির অংশ হিসেবে কোর্সপূর্ব ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্যও আলাদা ফি দাবি করতে পারেন।

এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে বেশ কিছু ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যেমন- অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথোলিক বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাভিয়েশন অস্ট্রেলিয়া, ব্যুরো অব মিটিওরলজি, চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানবেরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ইত্যাদি।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে অধ্যয়নের প্রধান কিছু ক্ষেত্র হচ্ছে ব্লু ইকোনমি, অর্থনীতি, পরিবেশ উন্নয়ন, ব্যবসা শিল্প, অবকাঠামোগত বিজ্ঞান প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বিষয়ক বিদ্যা ইত্যাদি।

আবেদনের যোগ্যতা

শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত দেশগুলোর নাগরিক হতে হবে। দেশের তালিকা আবেদনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ভিসা আবেদন করলে এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে না। এমনকি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব আছে, এমন কারো সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক থাকলে নেই শিক্ষার্থী আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। কেউ যেন বাড়তি সুবিধা না নিতে পারে ও প্রয়োজনে থাকা শিক্ষার্থীরাই শিক্ষাবৃত্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারেন এজন্য এ কড়াকড়ি নিয়ম। সামরিক সেবায় যুক্ত ব্যক্তিরাও এখানে আবেদন করতে পারবেন না।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর বয়স অবশ্যই ১৮ হতে হবে। এছাড়া, ইংরেজিতে ন্যূনতম দক্ষতা এ বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আবেদনকারীকে আইএলটিএস পরীক্ষায় অন্তত ৬.৫ স্কোর পেতে হবে। একই সমমানের টোফেল বা পিটিই স্কোর থাকলেও চলবে। তবে এই ফলাফলের মেয়াদ অবশ্যই চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকতে হবে।

মূলত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করেই প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের জন্য একই ধরনের মাপকাঠি রাখা হয়। যোগ্যতার হিসেবে শিক্ষার্থীর মধ্যে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন– শিক্ষাগত ফলাফল, ব্যক্তিগত ও পেশাদারি দক্ষতা, নিজের দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সক্ষমতা ইত্যাদি। এছাড়া নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ আছে। কারণ, যেকোনোভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতেই অস্ট্রেলিয়া এই শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে।

আবেদন প্রক্রিয়া

দুইভাবে এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে। অনলাইন পোর্টাল ও ইমেইলের মাধ্যমে। অনলাইন পোর্টাল যদি কোনো কারণে কাজ না করে, তাহলে ইমেইলে আবেদনপত্র পাঠানো যাবে। তবে, সুযোগ থাকলে পোর্টাল ব্যবহার করাই ভালো হবে। এজন্য OASIS নামে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট আছে। প্রথমেই oasis.dfat.gov.au এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পোর্টালে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য কিছু প্রশ্ন করা হবে। এছাড়া বেশ কিছু তথ্য প্রদান দেওয়া হবে। তথ্যগুলো যেন সঠিকভাবে দেওয়া হয় সেবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ধরনের সংশয় থাকলে আবেদনপত্র খসড়া করে রেখে দেওয়ার অপশন আছে। কিন্তু একবার জমা দেওয়ার পর আর সংশোধন করা যাবে না।

প্রয়োজনীয় নথি

অনলাইন বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করতে হবে। এর মধ্যে আছে শিক্ষার্থীর সিভি, যা তৈরি করা যাবে অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস বাংলাদেশ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে টেমপ্লেট থেকে, শিক্ষাজীবনের সকল শিক্ষাগত ডিগ্রির সনদপত্র ও অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র বা পাসপোর্ট, নিজ দেশের জন্য ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট প্ল্যান বা সম্ভাব্য উন্নয়নের পরিকল্পনা, ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষার নম্বরপত্র ইত্যাদি। উন্নয়নের পরিকল্পনার জন্যও উপরোল্লিখিত ওয়েবসাইটে টেমপ্লেট পাওয়া যাবে। এছাড়া, রেফার লেটার বা সুপারিশপত্র লাগবে ২টি, একটি শিক্ষাগত, অন্যটি পেশাদারী। পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণপত্র– এই ৪টি নথি নোটারি করিয়ে নিতে হবে। অন্যগুলোতে নোটারি করার প্রয়োজন নেই।

এই সাধারণ নথিপত্র ছাড়া স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য আবেদনকারীকে আলাদাভাবে গবেষণা প্রস্তাব জমা দিতে হবে। এজন্যও ওয়েবসাইটটিতে বিশেষ টেমপ্লেট আছে।

শর্তাবলী

শিক্ষাবৃত্তির আওতায় কোর্স চলাকালীন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া ও নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। এছাড়া, যে শিক্ষাবর্ষের জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়েছে সেই শিক্ষাবর্ষেই যেন লেখাপড়া শুরু হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোর্স শেষ হওয়ার ২ বছরের মাথায় অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে হবে। না হলে শিক্ষার্থীর কাছে পুরো শিক্ষাবৃত্তির সমপরিমাণ অর্থ ফেরত চাওয়া হতে পারে।

এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আরও তথ্য জানতে ভিজিট করতে পারেন- australiaawardsbangladesh.org/; অথবা ইমেইল করতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।  

Comments

The Daily Star  | English

US and China reach deal to slash tariffs

The two sides had reached a deal for a 90-day pause on measures and that reciprocal tariffs would come down by 115%.

22m ago