‘বন্দুকযুদ্ধে’ বৃদ্ধ নিহত

‘স্বপ্ন ছিল পুলিশ হবার, এখন আর সেই স্বপ্ন নাই’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে র‍্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বৃদ্ধ আবুল কাশেমের নাতনি নাদিয়া আক্তার। ছবি: স্টার

'আইনের লোক' হওয়ার স্বপ্ন ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে র‍্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বৃদ্ধ আবুল কাশেমের নাতনি নাদিয়া আক্তারের (১৫)। চোখের সামনে দাদার মৃত্যু, বাবার গ্রেপ্তার, চাচাদেরও মামলার আসামি করা— এসব দেখে সেই ইচ্ছা উবে গেছে তার।

কিশোরী নাদিয়া বলেন, 'ছোটবেলা থেইকা স্বপ্ন ছিল পুলিশ বা আইনের লোক হবার৷ এখন আর সেই স্বপ্ন নাই।'

কেন নাই জানতে চাইলে এ কিশোরী বলেন, 'এইসব ঘটনা দেহার পর আর থাহে?'

গত শুক্রবার রাতে সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁ গ্রামে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এক আসামিকে ধরতে গিয়ে র‍্যাবের অভিযানের সময় গুলিতে নিহত হন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবুল কাশেম। তিনি বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন।

তার মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা না করলেও র‍্যাবের ওপর হামলার অভিযোগে সোনারগাঁ থানায় মামলা করেছে র‍্যাব। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাশেমের বড় ছেলে নজরুল ইসলামকে। এ মামলার আসামি নজরুলের ভাই জহিরুলও।

এ ঘটনার পর থেকে 'ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে' সময় পার করছেন বলে জানান আবুল কাসেমের পরিবারে সদস্যরা। পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর শোকের মধ্যে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর কয়েকজন র‌্যাবের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আছেন কারাগারে। বাড়িতে পরিবারের নারী সদস্যরা 'উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা' নিয়ে আছেন।

সোমবার সকালে কথা হয় নিহতের নাতনি নাদিয়ার সঙ্গে। গুলিতে নাদিয়ার দাদা মারা গেছেন, বাবা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। ঘটনার ওই রাত থেকে মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান এ কিশোরী।

স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে নাদিয়া। ঘটনার রাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত বই ধরতে পারেনি। গত দুইদিন স্কুলেও যায়নি।

নাদিয়া বলে, 'দাদার বাড়ির পাঁচ-ছয়টা ঘর পরে আমাদের বাড়ি। বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকি। রাত ৯টার দিকে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। পরে যে ঘটনা ঘটছে তার কিছুই জানতাম না। যখন গোলাগুলি হয় তখন ঘুম থেইকা উঠছি। আমার বাবায় যখন যাইতে লইছে তখন দৌড়াইয়া আইয়া একজন কয়, দাদার পেটে গুলি লাগছে। তখন গিয়া দেখি দাদায় বাড়িতে গুলি খাইয়া পইড়া রইছে। ঘটনা তহন পর্যন্ত কিছুই জানি না।'

বৃদ্ধ দাদার সঙ্গে খুনসুটির সম্পর্ক ছিল কিশোরী নাতনির। অল্প ছুতোয় ঝগড়া হতো, আবার দুজনের ভাবও ছিল।

'দাদার লগে তিন দিন ধইরা কথা হয় নাই৷ তার লগে সবসময় আমি ঝগড়া করি। ছোট-খাডো জিনিস লইয়া হুদাই ঝগড়া করতাম। আবার তার টুকটাক কাজকাম আমিই কইরা দিতাম। হেই দাদার লগে তিনদিন কথা কই নাই। আমি কি আর জানতাম দাদার লগে এইটা হইব? এখন আফসোস হইতেছে।' এই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন নাদিয়া।

তিনি বলেন, 'ছোটবেলা থেইকা পুলিশ বা আইনের লোক হওয়ার স্বপ্ন আছিল, বিপদে-আপদে যাতে মানুষের পাশে থাকতে পারি। আর আমাদের এইখানে যদি খারাপ কাজ কেউ করে তাগোর বিরুদ্ধে দাঁড়ামু। পুলিশ হবার স্বপ্ন আর নাই। এইব ঘটনা দেহার পর স্বপ্ন আর থাহে?'

নাদিয়া বলেন, 'বিনা অপরাধে আমার বাবারে আর চাচারে মামলা দিছে। তারা না ঘটনাস্থলে ছিল না হেরা এই ঘটনার আপে-লাপে (আগে-পরে) কিছু জানে। শুধু শুধু তাদের মামলায় দিছে। বাড়ির সবাই এহন দৌড়াদৌড়ির উপর।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

8h ago