‘টানা অনুশীলন করে হাতে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল অনিকের’

Jaker Ali Anik
জাকের আলি অনিক। ফাইল ছবি

'ভাই, অনিক টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পেয়ে গেছে, আমাদের স্বপ্ন পূরণ আজ।' মুঠোফোনে খবরটা দিয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত ছিলেন জাকের আলি অনিকের বোন শাকিলা ববি। গত দুই বছর ধরে ঘরোয়া বিভিন্ন ধাপে টানা ভালো করার ফল পেয়েছেন এই কিপার ব্যাটার,  আয়ারল্যান্ড সিরিজের দলে ডাক পেয়েছেন তিনি। নিজে উচ্ছ্বসিত হলেও আবেগটা ধরে রাখছেন, মনোযোগ দিচ্ছেন পারফর্ম করার দিকে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা ভাসছেন স্বপ্ন পূরণের আবেশে, মনে করছেন কষ্টের দিনগুলোর কথা।  

বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে নুরুল হাসান সোহানের বদলে  নেওয়া হয় অনিককে। সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) তিন সেঞ্চুরিতে ৯৮.৪০ গড়ে করেন সর্বোচ্চ ৪৯২ রান। টেস্ট দলেই তার দাবিটা জোরালো বেশি। তবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন কুড়ি ওভারের ক্রিকেটেও দেখছেন অনিকের কার্যকারিতা। এবার  বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১১ ইনিংসে এক ফিফটিতে করেন ১৭৫ রান। এর আগে 'এ' দলের হয়েও বিভিন্ন সংস্করণে  টানা রান করেছেন তিনি। খেলার ধরণে আগ্রাসী মেজাজ থাকায় তার উপর ভরসা নির্বাচকদের।

দল ঘোষণার সময় অনিক ব্যস্ত ছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে। সুখবরটা জানতে পারেন ম্যাচের মধ্যে। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে হাজির হয়ে দেন প্রতিক্রিয়া, 'ম্যাচের মধ্যেই জানতে পেরেছি যে, টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়েছি। (খালেদ মাহমুদ) সুজন স্যার আমাকে জানিয়েছিলেন যে, "প্রস্তুত থাকিস। হয়তোবা (জাতীয় দলে সুযোগ) হতে পারে।" তবে নিশ্চিত খবরটা কিছুক্ষণ আগে ডাগআউটে জানতে পেরেছি। আমি তো ম্যাচে ছিলাম, কিপিং করলাম।'

'অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিলাম, নিজেকে তাগিদ দিচ্ছিলাম বড় পারফরম্যান্স করার। সুযোগ এসেছে, ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব ভালো কিছু করার।'

জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবরে অনিকের পরিবারে উৎসবের আবহ। বোন ববি জানালেন ২০১০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই অনিককে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তারা,  'সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। দীর্ঘ একযুগের সাধনার ফল পেয়েছে  অনিক । স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ২০১০ বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পায়। সেই থেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে যাত্রা শুরু। অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ, কষ্ট সহ্য করেছে আমার ভাইটা।'

কঠোর অনুশীলন, তীব্র তাড়না আর সর্বোচ্চ নিবেদন দিয়ে তিনি এসেছেন জাতীয় দলে। ববি স্মৃতিচারণ করেন তার ভাইয়ের কষ্টের দিনগুলোর কথা, 'পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। এই কথাটা একদম অনিকের সঙ্গে যায়। বিকেএসপিতে পড়ার সময় অনিক কোনোদিন প্র্যাকটিস মিস করেনি। একদিন বিকেএসপি থেকে কল দিয়ে বললো লাগাতার প্র্যাকটিস করে হাতে ইনফেকশন হয়ে গেছে। সামনে অনূর্ধ্ব ১৪ দলের বাছাই। এখন ইনফেকশন দেখালে কোচ টিমে নিবে না তাই রুম থেকেই গ্লাভস পরে মাঠে যায়।'

এরপরের পথ চলায় বাংলাদেশের হয়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেন অনিক। ২০১৬ সালে খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ।

জাতীয় দলে জায়গা পেলেও এখন চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। উইকেট কিপার ব্যাটার হিসেবে তাকে পালন করতে হবে শেষ দিকে ব্যাট করার দায়িত্ব। যেখানে আছে দ্রুত রান তোলার দাবি। নিজেকে সেই জায়গার জন্য প্রস্তুত করেছেন বলে জানালেন ২৫ পেরুনো হবিগঞ্জের তরুণ, 'আমি বিপিএলে এরকম জায়গায়ই (শেষ দিকের ওভারে) ব্যাটিং করেছিলাম। তখন আমার ওরকম পরিকল্পনা নিয়ে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা আছে। আবাহনীর অনুশীলনেও আমি স্লগের কিছু অনুশীলন করে নিয়েছি। তো এগুলো আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রস্তুতি আছে। এরকমভাবেই নিজেকে আমি প্রস্তুত করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

9m ago