ফ্ল্যাগশিপ ফোনের ৫ সীমাবদ্ধতা

ফ্ল্যাগশিপ ফোনের ৬ সীমাবন্ধতা
ছবি: সংগৃহীত

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক 'ফ্ল্যাগশিপ ফোন' বলতে কোন ফোনগুলোকে বোঝায়। ফ্ল্যাগশিপ শব্দটির প্রচলন শুরু হয় ১৭ শতকের দিকে। সে সময় নৌবাহারের নেতৃত্বপ্রদানকারী জাহাজগুলো একটি বিশেষ পতাকা ওড়াতো। বিশেষ পতাকাবাহী এই জাহাজের নাম ছিল 'ফ্ল্যাগশিপ'। সেই থেকে, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যকে নির্দেশ করতে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়। 

ফোনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। মুঠোফোনের বাজারজুড়ে যে ফোনগুলো নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে বলা হয় 'ফ্ল্যাগশিপ ফোন'। যেমন বর্তমান বাজারে আইফোন ১৪ প্রো-ম্যাক্স, স্যামসাং গ্যালাক্সি জি ফোল্ড-৪, শাওমি ১৩ প্রো ইত্যাদি ফ্ল্যাগশিপ ফোনের তকমা বহন করছে। 

কিন্তু দিন দিন ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলো বিভিন্ন সুবিধা থাকার সঙ্গে সঙ্গে অনেকদিক দিয়ে আবার পিছিয়েও পড়ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত মানুষ এসব ফোনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তবু এই দিকগুলো এভাবে বাড়তে থাকলে হয়তো আকর্ষণেও ভাটা পড়তে পারে। 
 
এসব ফোনের পিছিয়ে থাকা দিকগুলো নিয়েই এ লেখায় আলোচনা করা হবে। দেখে নেওয়া যাক কী কী 'নেই' আজকালকার ফ্ল্যাগশিপ ফোনে

ইয়ারফোন জ্যাক

আজকাল ব্লুটুথ ইয়ারফোনের জয়জয়কার হচ্ছে ঠিকই, তবে অনেকেই কিন্তু এখনো সেকেলে নিয়ম মেনে তারযুক্ত ইয়ারফোন, হেডফোন ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। বিভিন্ন ধরনের হেডফোন প্লাগের কারণে সাউন্ড কোয়ালিটিতে তারতম্য ঘটে। সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই নতুন ফোনগুলোতে হেডফোন জ্যাক না থাকাটা তাদের বেশ ঝামেলায় ফেলে। তখন আর বিকল্প না থাকায় সীমিত পরিসরের ব্লুটুথ মজুদ থেকেই বেছে নিতে হয়। 

এ সমস্যার সমাধান হিসেবে বাড়তি অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করা যায় ঠিকই, কিন্তু বাড়তি ঝক্কিও তো পোহাতে হয়। টু-ইন ওয়ান অ্যাডাপ্টার না লাগালে চার্জে দিয়ে গান শোনার বিলাসিতা আর হয়ে ওঠে না। 

চার্জার

অ্যাপলের বদৌলতে নতুন ফোনের সঙ্গে চার্জার দেবার নিয়মটাও দিন দিন নেই হয়ে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য বেশ মহৎ ও পরিবেশবান্ধব, তাতে সন্দেহ নেই। অ্যাপলের দাবি, সবার বাড়িতে আগে থেকেই যেহেতু চার্জার থাকে, সেহেতু এতে ই-বর্জ্য হ্রাস পায়। কিন্তু ব্যবহারকারীদের জন্য এই বাড়তি সচেতনতা হয়ে দাঁড়ায় বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণও। আসলে ফোনের সঙ্গে আসা চার্জারটির মতো নির্ভরতা অন্য চার্জারে মেলে না। কেন না সেই চার্জারটি খুব নিশ্চিতভাবেই নির্দিষ্ট ফোনের মডেলের জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এছাড়া, কেউ যদি ফাস্ট চার্জিংয়ের আলাদা করে নতুন চার্জারই কেনেন– তাহলে কিন্তু পরিবেশবান্ধব হবার টোটকাটা আর কাজে লাগছে না। 

ইয়ারফোন

নতুন ফোন কেনার আনন্দে জড়িয়ে থাকতো নতুন চার্জার আর ইয়ারফোন। দুঃখজনকভাবে ফ্ল্যাগশিপ ফোনের আধুনিক চর্চায় এ দুটোই গেছে হারিয়ে। ২০২০ সাল পর্যন্তও অবশ্য এ রীতি চালু হয়নি। কিন্তু অ্যাপল যখন থেকে আইফোন ১২-এর প্যাকেজিংয়ে এসব পণ্য বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তখন থেকে অন্য ফ্ল্যাগশিপ ফোনও একই কাজ করে। তবে এই চর্চাটি স্যামসাং ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে ঝামেলার কেন না তারা আর একেজি-টিউনড ইয়ারফোনগুলো পাবে না। 

মেমোরি কার্ড স্লট

সিম কার্ড ট্রে'র সঙ্গে মাইক্রোএসডি মেমোরি কার্ড স্লট থাকাটা খুব পরিচিত বিষয় ছিল। কিন্তু পরে অন্যান্য উপাদানের জন্য 'জায়গা তৈরি' করতে ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলো সেটিও সরিয়ে দেয়। হয়তো বেশিরভাগ লোকের জন্যই ফোনে থাকা ১২৮ গিগাবাইটের মেমোরি যথেষ্ট, কিন্তু কারও যদি প্রয়োজন পড়ে থাকে– সে ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো বিকল্প থাকছে না। অধিকাংশ ফ্ল্যাগশিপ ফোনে সেক্ষেত্রে যে বিকল্পরাখা হয়েছে, তাও অতি ব্যয়বহুল– ১০০ মার্কিন ডলার খরচ করলে অতিরিক্ত ১২৮ গিগাবাইট মেমোরি পাওয়া যাবে; যেখানে অনেক কম মূল্যে মেমোরি কার্ড ক্রয় করা যায়। 

রিমুভেবল ব্যাটারি
 
এ তালিকার অন্য সব না থাকা জিনিসের আগেই অবশ্য বিলোপ হয়েছে 'রিমুভেবল ব্যাটারি'র যুগ। আইফোনে তো কখনো তা ছিলই না, ওদিকে স্যামসাংও ২০১৫ সালে গ্যালাক্সি এস-৬-এর সময় থেকে বাদ দিয়ে দেয়। মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই এ কাজ করা হয়েছে। কেন না আগে স্মার্টফোনের ব্যাটারি অত বড় না হলেও, এখন ৫০০০ মেগাহার্টজই আদর্শ ধারণক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী যখন তখন ফোনে একটু ঝামেলা হলেই যদি ব্যাটারি খুলে বসেন, তাহলে বিপদ ঘটাটা খুব স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে এর সঙ্গে ফোনগুলো যে আগের মতো সহজে মেরামতযোগ্য থাকছে না, সেকথাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। 

 

তথ্যসূত্র: এমইউও, জিএসএমঅ্যারেনা, পিসিম্যাগ

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

The life cycles of household brands

For many, these products are inseparable from personal memory

13h ago