জাবিতে রাজউকের পরীক্ষা করা ১৩ ভবনের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ

মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩টি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছে রাজউক। ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩টি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১০টি ভবনকে মজবুতিকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সেগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, পুরনো কলাভবন, নতুন কলাভবনের ৫টি অংশ, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের দুটি অংশ।

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রাজউকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন বিবেচনায় এ সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এগুলো ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক পুরনো ভবন রয়েছে। তবে কেবল ১৩টি ভবনকেই কেন ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালীর সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
 
তিনি বলেন, 'প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ভবনের ডিটেইলস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করা হয়। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকায় বাকি ভবনগুলোর ডিইএ পরীক্ষা করা হয়নি। এজন্য সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কি না জানা সম্ভব হয়নি। সেজন্য পরীক্ষিত ওই ১৩টি ভবনকেই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এসব সুপারিশ করা হয়।'
 
আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগরের সব ভবন পরীক্ষা করলে তো আমরা অন্য কোথাও কাজ করতে পারব না। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, সাভার ও নারায়ণগঞ্জসহ আরও কিছু জায়গায় কাজ করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এর বাইরে জাবির আরও কিছু ভবনের ভিজুয়াল স্ক্রিনিং অ্যাসেসমেন্ট (আরভিএসএ) করা হয়েছে এবং কিছু ভবনের প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (পিইএ) করা হয়েছে। তবে এসব পরীক্ষা এই ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলার জন্য যথেষ্ট নয়।'

ডিটেইলস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা করে একটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান আনসারি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো ভবন ভেঙে ফেলা বা টিকিয়ে রাখার যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, সেটা ডিইএ পরীক্ষা ছাড়া কখনোই বলা সম্ভব না। সব ভবনের ক্ষেত্রে আমরা ডিইএ পরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নিই যে, ভবনটি রাখব না ভেঙে ফেলব। ডিইএ পরীক্ষাটি অনেক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ এবং খুবই যথাযথ একটি প্রক্রিয়া। ২-৩ মাস সময় নিয়ে করা হয় পরীক্ষাটি।'

ডিইএ পরীক্ষা বাদে অন্য পরীক্ষাগুলো যথাযথ নয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল সালাম মো. শরীফ মিয়া জানান যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও পুরনো ভবন রয়েছে এবং সেগুলোর অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, 'সালাম-বরকত হলের হাউজ টিউটর ভবন, ফয়জুন্নেসা হলের ক্যান্টিন অনেক ঝুঁকিতে আছে। হাউজ টিউটর ভবনের কলামগুলো সরে গেছে, দেয়াল ফেটে গেছে। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের ক্যান্টিনের অবস্থাও খারাপ, তীরের মতো বাঁকা হয়ে আছে। যার চাপে জানলাগুলোও বেঁকে গেছে।'

অন্য ভবনগুলো ডিইএ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা করবেন কি না এবং পরীক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে কী ব্যবস্থা নেবেন, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এগুলো তো কারিগরি বিষয়।'

রাজউকের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, 'রাজউকের চিঠি পেয়েছি। তবে ভেঙে ফেলা বা যা-ই করা হোক, সেসব সিন্ডিকেটের আলোচনার বিষয়। এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago