লিটন-সাকিবের ঝলকে আয়ারল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে সিরিজ বাংলাদেশের

Shakib Al Hasan & Liton Das
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চট্টগ্রামে খেলা শুরুতে বিঘ্ন হলো বৃষ্টিতে। ম্যাচ শুরুর পর আবার চার-ছক্কার বৃষ্টিতে রনি তালুকদারকে নিয়ে রেকর্ডের মালা গাঁথলেন লিটন দাস। রান উৎসবে পরে যোগ দিলেন সাকিব আল হাসান আর তাওহিদ হৃদয়ও। বিশাল পুঁজির পর বল হাতেও জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার একের এক ছোবলে দিশেহারা আয়ারল্যান্ড দিতে পারল না কোন জবাব। সফরকারীদের বিধ্বস্ত করে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।

বুধবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মেঘলা আকাশের নিচে যা খেলা হলো তাতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ঝলকে যেন বিদ্যুৎ চমকালো। ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে সাকিবরা ৩ উইকেটে ২০২ রান করার পর আয়ারল্যান্ড থামল স্রেফ   ১২৫ রানে। ৭৭ রানের বিশাল জয়ে  ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম (১৮ বলে) ফিফটি করা লিটনই রাঙিয়েছেন বেশি। ৪১ বলে ১০ চার, ৩ ছক্কায় তিনি করেন ৮৩ রান। তার সঙ্গে রেকর্ড ১২৩ রানের জুটিতে ২৩ বলে ৪৪ করেন রনি। হৃদয় ১৩ বলে ২৪ আর সাকিব ২৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। আয়ারল্যান্ড ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট পাওয়া শুরু সাকিবের। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২২ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তাসকিন আহমেদের প্রথম বলেই ফেরেন পল স্টার্লিং। তাসকিনের বেরিয়ে যাওয়া বলে স্টার্লিংয়ের এজড হওয়া বল ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ধরেন লিটন।

দ্বিতীয় ওভারে সাকিবের বলে বাজে শটে উইকেট ছুঁড়ে দেন লোরকান টাকার। চতুর্থ ওভারে এসে সাকিব ধরেন জোড়া শিকার। রস অ্যাডায়ারকে আর্মারে বোল্ড করে দেওয়া গ্যারেথ ডেলানি তার বলে ধরা দেন কিপারের হাতে। ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আয়ারল্যান্ড। সাকিব তার পরের ওভারে জর্জ ডকরেলকেও এলবিডব্লিউতে ছাঁটেন। ওই ওভারেই বোল্ড হয়ে যান হ্যারি টেক্টর। ৫ উইকেট শিকারের পথে  টিম সাউদিকে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সবচেয়ে বেশি উইকেট (১৩৬) শিকারিও হয়ে যান বাংলাদেশের তারকা।

বাকি কাজটা সেরে ফেলেন পেসাররা। হাসান মাহমুদ ছাঁটেন মার্ক অ্যাডায়ারকে। ফিওন হ্যান্ডকে এলবিডব্লিউ করে দ্বিতীয় উইকেট নেন তাসকিন। দলের বাকি সবার ব্যর্থতার ভিড়ে নিজেকে আলাদা করে চেনান কার্টিস ক্যাম্ফার। পুরো সিরিজে দলের হয়ে একমাত্র ফিফটি আসে তার ব্যাটে। তাতে অবশ্য হারের  ব্যবধানই কমেছে। কার্টিসকেও পরে আউট করেছেন তাসকিনই।

Litton Das
৮৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের পথে লিটন দাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আকাশ মেঘলা দেখে এদিনও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টির পর বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হতে আয়ারল্যান্ড পড়ে ঝড়ের কবলে। সেই ঝড় অবশ্য চার-ছক্কার। আইরিশদের সাদামাটা বোলিং গুঁড়িয়ে উত্তাল হয়ে উঠে লিটন-রনির ব্যাট। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তারা ভাঙতে থাকেন একের পর এক রেকর্ড।

১৬ বছর আগে করা মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে ফিফটির রেকর্ড ভেঙে ১৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন লিটন। চাবুকের মতো পুল, এগিয়ে এসে লফটেড শট, লেট কাটে বাউন্ডারির বাহার দেখা গেছে তার ব্যাটে। লিটন এতটাই দারুণ খেলছিলেন তাতে ভালো খেলেও আড়ালে পড়ে যান রনি। অথচ আগের ম্যাচে ফিফটি করা এই ওপেনার এদিনই ছিলেন তেতে। স্ট্রেট ড্রাইভ, স্লগ সুইপে ছক্কা মেরেছেন তিনিও।

মাত্র ৪৩ বলে একশো স্পর্শ করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা নিজেদের সবচেয়ে দ্রুততম। টি-টোয়েন্টিতে সেরা জুটিও এদিন পায় বাংলাদেশ। দশম ওভারে রনি আউট হলে ভাঙে ১২৪ রানের জুটি। এর আগে ২০২১ সালে সৌম্য সরকার ও নাঈম শেখ গড়েছিলেন ১০২ রানের জুটি।

আগের দিন ২৪ বলে ফিফটির পর ৩৮ বলে ৬৭ করেছিলেন রনি। এদিন ২৩ বলেই ফিফটি পেতে পারতেন। বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেওয়ার আগে ২৩ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় তিনি থামেন ৪৪ করে।

লিটন ছুটছিলেন দুর্বার গতিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। লিটনকে থামানোর কোন পথও খুঁজে পাচ্ছিলেন না আইরিশ বোলাররা। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন নিজেরই ভুলে।  বেন হোয়াইটের বাজে এক বলে। লেগ স্পিনার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে এক বল দিয়েছিলেন লিটনকে, ছেড়ে দিলে হতো ওয়াইড। লিটন তা তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। ৪১ বলের উপস্থিতিতে গ্যালারি মাতিয়ে ১০ চার, ৩ ছক্কায় ৮৩ করে থামেন তিনি। ১২ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ১৩৮। পরের ৬ ওভারে যোগ হয় আরও ৬৪ রান।

২৪ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। ১৩ বলে ২৪ করে শেষ ওভারে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দুইশো ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৭ ওভারে বাংলাদেশ এই রান উঠিয়েছে ওভারপ্রতি ১২ করে। যার জবাব দেওয়ার সামর্থ্য আইরিশদের ছিল না।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago