প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা-ক্ষোভ

শামসুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও সাংবাদিকদের সংগঠন। পৃথক বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুসংহত করা হয়েছে। যদিও দেশে মত প্রকাশ ও সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করতে বিভিন্ন আইন করা হয়েছে। একজন সাংবাদিককে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য চরম হুমকি।

সাংবাদিককে তুলে নেওয়া শুভ লক্ষণ নয়: বাংলাদেশ ন্যাপ

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা মুখে বললেও প্রকৃত অর্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিপক্ষেই নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। তারা ভুলে যান গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। গণতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি চেতনা, একটি স্বপ্ন ও একটি দাবি। গণমাধ্যম-কর্মীদের গভীর রাতে তুলে নিয়ে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার চেষ্টা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।

গভীর রাতে সাংবাদিক আটক সরকারের মাফিয়া চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর আলোচিত রিপোর্টের কারণে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত বলে মনে করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

সংগঠনটির ভাষ্য, একটি পত্রিকার রিপোর্টের জবাব তথ্যপ্রমাণ দিয়ে যুক্তিসংগতভাবে মোকাবিলা করার সাহসটুকুও বর্তমান মাফিয়া সরকারের নেই। স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকার আলোচিত রিপোর্টের কারণে গভীর রাতে একজন তরুণ সাংবাদিকের বাসায় হানা দেওয়া, রাতভর তল্লাশির নামে নির্যাতন, ভোরবেলা আটক করে নিয়ে যাওয়ায় স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, এই নির্যাতন ও মাফিয়াগিরি কোনো বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়; বরং এই মাফিয়াগিরি ও কাঠামোগত স্বৈরতন্ত্রই বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা।

এডিটরস গিল্ডের গভীর উদ্বেগ

শামসুজ্জামান শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ।

আজ বুধবার সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেলের বরাতে দেওয়া বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, 'প্রথম আলোর সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে সিআইডির পরিচয়ে তুলে নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। গণমাধ্যমের জন্য মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য। প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতি বিরুদ্ধ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেই এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড।'

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের ক্ষোভ ও উদ্বেগ

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, সাংবাদিকেরা দেশের জনগণকে ও সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে আটক করা, গণমাধ্যম কর্মীদের কণ্ঠরোধ করার আরও একটি অপচেষ্টা যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতারও পরিপন্থী। এমএসএফ সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে পরিবেশ তৈরি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের প্রত্যাশিত ভূমিকা এবং শামসুজ্জামানের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।

ভয় দেখিয়ে সত্য তুলে ধরা বন্ধ করা যাবে না: গণসংহতি আন্দোলন

শামসুজ্জামানকে সিআইডি পরিচয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, 'স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে "চাইলের স্বাধীনতা চাই" বলে জাকির হোসেন নামে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে রিপোর্ট করার পর সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নিদারুণ ব্যর্থতা, জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগের বিষয়টা এ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আবারও সামনে আসে। এই বক্তব্য অতি দ্রুততার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে এটাই প্রমাণ করে যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছে, মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি করছে।

'আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, র‌্যাব হেফাজতে মেরে কিংবা মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এ দেশের জনগণ বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে এ স্বৈরশাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

2h ago