জরায়ুর রোগ এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয়ে আর দেরি নয়

এন্ডোমেট্রিওসিস জরায়ুর দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহজনিত রোগ। এই রোগটি নারীদের শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। জরায়ুতে তীব্র ব্যথা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রোগটির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. ইশরাত জেরিন।

এন্ডোমেট্রিওসিস কী?

জরায়ুর ভেতরের দেয়ালকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। মাসিকের ঠিক আগে নারীদের দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের কমে যায়। এর প্রভাবে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর ভেঙে কিছু রক্তসহ যোনীপথে বের হয়ে আসে। বয়ঃসন্ধিকালের পর একজন নারীর দেহে প্রতি মাসেই চক্রাকারে এটি ঘটে। এন্ডোমেট্রিওসিস রোগে জরায়ুর ভেতরের দেয়াল তথা এন্ডোমেট্রিয়াম দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী, মূত্রথলি, মলাশয়, খাদ্যনালী, মলাশয়ের পেছনের অংশ, ফুসফুস এমনকি নাক ও নেত্রনালী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং সেখানে বাড়তে থাকে। এটি যখন ডিম্বাশয়ের ওপর বাড়তে থাকে তখন ডিম্বাণুগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া এই রোগ ডিম্বস্ফুটনেও বাধা তৈরি করে। ডিম্বাশয়ের ট্যিসুকে ধ্বংস করে দেয় এবং এর ভেতর মাসিকের সময় রক্ত জমা হতে থাকে। মাসিকের রক্তের জলীয় অংশ প্রাকৃতিক নিয়মে শোষিত হলেও রক্তকণিকাগুলো সিস্টের ভেতর আটকা পড়ে থাকে। এই রক্তকণিকা ঘনীভূত হয়ে তরল চকলেট সদৃশ হয় বলে একে চকোলেট সিস্ট বা এন্ডোমেট্রিওসিস সিস্টও বলা হয়। এটি ডিম্বনালীকে আক্রান্ত করে ডিম্বনালীর গঠন পরিবর্তন করে দেয়। এর ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হতে পারে না এবং নারী বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়।

এন্ডোমেট্রিওসিস কেন হয়?

এই রোগের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে প্রত্যেক নারীরই মাসিকের রক্তের কিছু অংশ ডিম্বনালী দিয়ে তলপেটের বিভিন্ন অংশে পৌঁছাতে পারে। ম্যাক্রোফেজ নামক শ্বেত রক্তকণিকা এই অবাঞ্ছিত এন্ডোমেট্রিয়ামকে ধ্বংস করে দেয়। তবে কিছু মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অক্ষমতার কারণে এই অবাঞ্ছিত এন্ডোমেট্রিয়ামকে ম্যাক্রোফেজ ধ্বংস করতে পারে না। যার ফলে এটি তলপেটের বিভিন্ন অংশে বাড়তে শুরু করে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ সৃষ্টি করে। কিছু জেনেটিক বা বংশগত কারণ ও এই রোগের জন্য দায়ী।

এন্ডোমেট্রিওসিস কার হয়?

শতকরা ৬-১০ শতাংশ নারীদের এই রোগে ভুগতে দেখা যায়। তাছাড়া নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ৩০-৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করতে না পারার কারণ হিসেবে এই রোগকে দায়ী করা হয়।

এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ

  • মাসিকের ২-৩ দিন আগ থেকে তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়া
  • মাসিক শুরু হলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া এবং শেষ এর দিকে ব্যথা তীব্র হওয়া
  • মাসিক শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তলপেটে ব্যথা থাকা
  • প্রায় ২৫ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে কোনো ব্যথা ছাড়াই এই রোগ থাকতে পারে
  • আক্রান্তদের মধ্যে ৪০-৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়

এন্ডোমেট্রিওসিস কোন বয়সে হয়?

আগে ধারণা করা হতো ৩০-৩৫ বছর বয়সে এই রোগ হয়। তবে বর্তমানে নানারকম পরিবেশগত ও জিনগত কারণে ১৫-২৫ বছর মেয়েদের মাঝেও এই রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই ভয় বা সংকোচ না করে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এন্ডোমেট্রিওসিস ও সচেতনতা

এন্ডোমেট্রিওসিস এডিনোমায়োসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ইএএসবি) এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে। সারা বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন নারী এই রোগে আক্রান্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।

এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করতেই অনেক সময় লেগে যায়। তাই এই রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আক্রান্তদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই মানসিক অবসাদে ভোগেন। কোনো কিছুতেই তারা আগ্রহ পান না।

এ রোগ দ্রুত নির্ণয়, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পুষ্টিকর এবং ভিটামিন এ, বি, সি যুক্ত খাবার এ রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম ও এই রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Comments

The Daily Star  | English

Mob violence now alarmingly routine

Rights groups say the state's failure to act swiftly and decisively has to some extent emboldened mobs and contributed to a climate where vigilante justice is becoming commonplace.

8h ago