খাবারের ‘বিষক্রিয়া’র অভিযোগ: ওয়ালটনের ৩ শ্রমিকের মৃত্যু
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির কারখানার ৪ শ্রমিক ইফতারের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ৩ জন মারা যান।
মৃত শ্রমিকরা হলেন: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাইর গ্রামের আশরাফ আলী (৩০), ভূয়াপুর উপজেলার আব্দুল বারেক বারী (৩০) ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ফরিদ মিয়া (২৯)। এছাড়া, কারখানায় পাউডার কোটিং সেকশনের অপারেটর আল-আমিন (৩০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স খাদিজা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়ালটন কারখানা থেকে রাত ৯টার দিকে ৪ শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জনকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। একজন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।'
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রতিদিন সব কর্মীকে ইফতার সরবরাহ করি। কয়েকজন ইফতার করার পর বাইরে থেকে কোমল পানীয় কিনে খেয়েছেন। এরপরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জন মারা যান।'
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল ওয়ালটনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'ইফতার গ্রহণের সময় ৫ শ্রমিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মূল ডাইনিংয়ের বাইরে শরবত জাতীয় পানীয় তৈরি করে পান করেন।'
'এর কিছুক্ষণ পর ওই ৫ শ্রমিকের মধ্য থেকে ৩ জন অসুস্থতাবোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ালটনের মেডিকেল টিম তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে হাসপাতালে নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্সে করে দ্রুত পার্শ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ওই ৩ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন।'
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'ওয়ালটন সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ প্রয়াত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে আছে ও থাকবে। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ উক্ত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।'
ওয়ালটন পরিবারের ৩ সদস্যের আকস্মিক প্রয়াণে কর্তৃপক্ষ ১ দিনের শোক ঘোষণা করার পাশাপাশি আজ সোমবার কারখানা বন্ধ ঘোষণার কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল কারখানার সরবরাহ করা ইফতারি খেয়ে 'বিষক্রিয়ায়' শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে—এমন সংবাদে গাজীপুরের চন্দ্রায় প্রায় ৪ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির শ্রমিকরা। সেসময় বেশ তারা কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
গতকাল রোববার রাত সোয়া ৯টা থেকে ভোররাত দেড়টা পর্যন্ত চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানার সামনে শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বলে ডেইলি স্টারকে জানান সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'সড়কে টায়ার ও শুকনো কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। মহাসড়কে ওয়ালটন কারখানা থেকে নিরাপদ দূরত্বে যানবাহনের দীর্ঘ জট লেগে যায়।'
Comments