রাজশাহী সিটি নির্বাচন: লিটনের একমাত্র ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দলীয় কোন্দল

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অনুপস্থিত থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহজ জয়ের মঞ্চ তৈরি হয়েছে। তবে লিটন শিবিরের অভিযোগ, তাদের জয়ের পথে আসল হুমকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে নয়, বরং নিজের দলের ভেতর থেকে আসতে পারে।

লিটনের পক্ষে প্রচার চালানো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপ ও নেতাদের প্রোফাইলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে একটি 'স্বার্থান্বেষী মহল' নিজেদের প্রার্থীকে 'পরাজিত করতে মরিয়া' হয়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত গোষ্ঠীর সমর্থকরা এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে, এগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক থাকার প্রচেষ্টা।

গত সপ্তাহে উত্তেজনা চরমে ওঠে যখন রাজশাহীর কুমারপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিল বের করে। ক্ষোভে ভরা তাদের শ্লোগান ছিল সরাসরি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে লক্ষ্য করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ডাবলু সরকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর থেকেই এই অস্থিরতার শুরু।

রাজশাহীর বিভক্ত গ্রুপগুলোর একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, লিটন নিজেই। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব, এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। 

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এনামুল হক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের মনসুর রহমানের মতো প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সমর্থনে লিটনের অবস্থান জোরালো।

তবে লিটনের গ্রুপের বিপরীতে রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা।

মেয়র লিটন ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ২০১৮ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই। সে সময় তাদের দ্বন্দ্ব কেন্দ্র পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে লিটন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মীর ইকবালের বিরোধিতা করায় তাদের মধ্যকার ঠান্ডা লড়াই বেড়ে যায়। মীর ইকবাল ডাবলু সরকারের ভগ্নিপতি। লিটনের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন।

তবে চলতি বছরের শুরুতে ডাবলু সরকারের একটি স্ক্যান্ডাল ভিডিও ভাইরাল হলে শহরের রাজনীতিতে তার প্রভাব কমে যায়।

রাজশাহী আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম বলেন, 'লিটনের সঙ্গে নগরীর আওয়ামী লীগের রাজনীতি অবিচ্ছেদ্য, যা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়।'

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, 'লিটনের অগ্রগতি তাদের নিজেদের অবস্থান ক্ষুণ্ন করতে পারে এই আশঙ্কায় দলের কিছু সদস্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে।'

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন লিটনের বিরোধিতার কোনো ধারণা অস্বীকার করে বলেন, 'লিটন যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনীত, তাই তার বিরোধিতার প্রশ্নই ওঠে না। লিটনের জয় নিশ্চিত করতে আমি আমার সব অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছি।

একইভাবে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 'মুষ্টিমেয় কিছু লোক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে লিটনের পক্ষে থাকার চেষ্টা করছে।'

লিটনের জয় নিশ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিটনের বিপক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রার্থী নেই।

তিনি বলেন, 'নির্বাচনী বিধি মেনে আমি লিটনের কোনো প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত আছি, কারণ সংসদ সদস্যদের সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago