মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

প্রতীকী ছবি। ডিজাইন: ফাতেমা জাহান এনা

দেশে-বিদেশে অর্থনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকায় এবং পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ায় সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বিষয়ে সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, গত ১২ বছরের মধ্যে এটিই গড় মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের দশকে দেখা ৫-৬ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটি অনেক বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

২০২০-২৩ অর্থবছরের শুরুতে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল।

যুদ্ধ শুরুর পর ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দুর্বল মান এবং জ্বালানি সংকট অব্যাহত থাকায় সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা প্রথমে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করেছিল।

জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাটির তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২০-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ মাস ধরে ৯ শতাংশের বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতি গত ৫ মাসে ৮ শতাংশ ও ১ মাসে ৭ শতাংশের বেশি ছিল।

গত জুনে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১ মাস আগের তুলনায় ২০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়ায়। এটি মে মাসে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে নেমে আসে।

বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাসে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ৪৯ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ায়, যা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্রমাগত ভোগান্তির কথাই তুলে ধরে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৩৬ বেসিস পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশে।

শেষ পর্যন্ত খাদ্যমূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদরা ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অপর্যাপ্ত উদ্যোগকে দায়ী করেছেন।

তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১ বছরে ৫ বার পলিসি রেট বাড়িয়ে দিলেও ঋণের সুদের হারের সীমা ও মূলত মুদ্রার নিয়ন্ত্রিত বিনিময় হারের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

সম্প্রতি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের মধ্যে আছে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি রোধে ভর্তুকি।'

তিনি আরও বলেন, 'চাহিদা কমে যাওয়ার বিপরীতে সরকার সুদের হার নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চমাত্রায় রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। এই নীতিগুলো মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে।'

'তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, যে দেশগুলো সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে চাহিদা কমানোর নীতি নিয়েছে, সেসব দেশ মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সফল হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাওয়া, আমদানি পণ্যের উচ্চমূল্য ও টাকার বড় অবমূল্যায়নসহ অভ্যন্তরীণ পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ঊর্ধ্বমুখী দামের সমন্বয়ও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

এটি আরও জানায়, এসব কারণ সম্মিলিতভাবে অভ্যন্তরীণ পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। বাজার সিন্ডিকেটের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাবও বর্তমান সিপিআই মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পণ্য সরবরাহের শর্ত শিথিল করায় এবং খাদ্য ও জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি কমেছে।

এর দৃষ্টিতে, মূলত পণ্যের অভ্যন্তরীণ মূল্য না কমানো, পর্যাপ্ত বাজার প্রতিযোগিতার অভাব এবং দেশীয় মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশের অর্থনীতিতে সামঞ্জস্যগুলো সমানভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Inflation climbs to 12-year high লিংকে ক্লিক করুন

Comments

The Daily Star  | English
health sector reform in Bangladesh

Health sector reform: 33 proposals set for implementation

The Health Ministry has selected 33 recommendations from the Health Sector Reform Commission as it seeks to begin implementing the much-needed reform process in the country’s health system.

15h ago