অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটরের হিসাব কতটা নির্ভরযোগ্য
সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার বিষয়ে অনেককেই চিন্তিত হতে দেখা যায়। আর এতে ওজন ও সুস্থ খাদ্যাভ্যাসের দিকগুলো বেশি ভূমিকা রাখে। ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা ও অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা এবং তাতে থাকা উপাদানগুলো নির্ধারণ করা উচিত। এর জন্য ঠিকঠাক ক্যালরি হিসেব করাটা খুব জরুরি।
আজকাল অনলাইনের যুগ। সব কাজেই অনলাইন সুযোগ-সুবিধার বিস্তর প্রভাব। এক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া যায় অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটরের। অনেকে সেটা করেও থাকেন, কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায় এর যথার্থতা নিয়ে। কতটা নির্ভরযোগ্য এসব হিসাব?
অনলাইন ক্যালকুলেটর যেভাবে কাজ করে
অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটর মূলত ব্যক্তির প্রতিদিনের ক্যালরি চাহিদা নির্ধারণ করে। নির্ধারণের এ প্রক্রিয়ায় যে বিষয়গুলো খেয়াল করা হয় তা হচ্ছে লিঙ্গ, বয়স, ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক সক্রিয়তা। এতে করে এটিও বোঝা যায় যে, ব্যক্তি ১ দিনে কত ক্যালরি খরচ করেন এবং ওজন কমানো, বাড়ানো বা একই রাখতে তাকে কতটুকু ক্যালরি ডেফিসিট বা ঘাটতি তৈরি করতে হবে।
এই বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে নিম্নোক্ত দিকে নজর দেওয়া জরুরি-
বিএমআই
বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স মূলত একটি ফর্মুলা, যার মাধ্যমে ব্যক্তির শারীরিক ওজন কতটা স্বাস্থ্যকর, কতটা বাড়ানো বা কমানো প্রয়োজন– সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। মোট ওজনকে উচ্চতা দিয়ে ভাগ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায়, তাই ব্যক্তির বিএমআই। ওজন কম, বেশি, স্থূল– এসবই এই সংখ্যা থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব। বিএমআই পরিমাপের ভিত্তিতে ওজনের যে শ্রেণিগুলো নির্ধারণ করা হয়, তা হলো–
● ১৮.৫ থেকে কম হলে 'ওজন কম'
● ১৮.৫-২৪.৯ হলে 'স্বাভাবিক ওজন'
● ২৫-২৯.৯ হলে 'ওজন বেশি'
● ৩০ বা এর চেয়ে বেশি হলে 'স্থূল'
বিএমআর
বিএমআর বা ব্যাসাল মেটাবোলিক রেট দিয়ে বোঝানো হয়, বিশ্রামে থাকা অবস্থাতেও মৌলিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ব্যক্তির দেহে ক্যালরির প্রয়োজন হয়। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে পেশি সঞ্চালন ও হজমক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো। অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটর উচ্চতা, ওজন ও অন্যান্য মাপকাঠির ভিত্তিতে বিএমআর হিসাব করে থাকে।
শারীরিক শক্তি ব্যয়ের সর্বোচ্চ মাধ্যম কিন্তু শরীরচর্চা বা ব্যায়াম নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরে চলমান মেটাবোলিজম বা বিপাকক্রিয়া। শরীরচর্চা নিশ্চয়ই ক্যালরি খরচের ক্ষেত্রে বাহ্যিক ভূমিকা রেখে থাকে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই বিপাকক্রিয়ার হার যার যত বেশি হয়, ক্যালরি খরচের গতিও তার তত বেশি। এমনকি মেটাবোলিজম আরও গতিশীল করতেও ব্যায়াম কাজে লাগে। তাই বিএমআরই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি, যা অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটরে ব্যবহার করা হয়।
টিডিইই
ইংরেজি এই প্রত্যয়টির সম্পূর্ণ রূপ হচ্ছে 'টোটাল ডেইলি এনার্জি এক্সপেন্ডিচার' বা দৈনিক শক্তিব্যয়ের সামগ্রিক পরিমাণ। প্রতিদিন আমরা যতটুকু শক্তি ব্যয় করি, সেটিই আমাদের 'টিডিইই'। এই সংখ্যাটি অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটরে হিসাব করা হয় ২টি জিনিস থেকে। প্রথমত বিএমআর এবং দ্বিতীয়ত দৈনন্দিন কার্যক্রমের পরিমাণ। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তি ওজন কমাতে বা বাড়াতে চাইলে টিডিইই হিসাব করে এগোতে পারেন।
ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন দরকারি বিষয় তো জানা গেল, এখন আসা যাক মূল যে প্রশ্নটি সামনে রেখে এগোনো হয়েছিল তার দিকে। অনলাইন ক্যালরি ক্যালকুলেটরের হিসাব কি যথার্থ বা নির্ভরযোগ্য কি না এবং হলেও কতটুকু? এটি মূলত নির্ভর করে, এতে যে তথ্যগুলো ইনপুট দেওয়া হচ্ছে তা কতটুকু যথার্থ ও তা যথেষ্ট কি না সেটির ওপর।
প্রোফাইল তৈরির সময় কেউ যদি তার উচ্চতার বিষয়ে ১ ইঞ্চিও হেরফের করে, তাহলে সেই ১ ইঞ্চির উপর নির্ভর করে বিএমআর, বিএমআই, টিডিইই ও ক্যালোরি ডেফিসিট– এ সবকিছুরই হিসাব যাবে বিগড়ে। ঠিক একইভাবে যদি নিজের দৈনন্দিন কার্যক্রমের বিষয়ে নিখুঁত তথ্যের যোগান না দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চয়ই ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট ছাঁচে হিসাব করাটা এই ক্যালকুলেটরের পক্ষে সহজ হবে না।
তবে হ্যাঁ, কাছাকাছি একটা ফলাফল এটি থেকে পাওয়া সম্ভব, যা অনুসরণ করে এগোলেও একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা চালিয়ে যাওয়া যায়। তবে যত বেশি নিখুঁত তথ্য, তত বেশি নিখুঁত ফলাফল– এই মূলনীতির বাইরেও প্লেস্টোর থেকে অনলাইন ক্যালোরি ক্যালকুলেটর ইনস্টল করার আগে এর রেটিং ও রিভিউগুলো দেখে নেওয়া দরকার। নিম্নমানের ক্যালকুলেটর ডাউনলোড না করে অনেক মানুষ ব্যবহার করে এবং ভালো ফলাফল মেলে এমন ক্যালকুলেটর ডাউনলোড করলে ক্যালরি হিসাব করে সুস্থতার পথে যাত্রা আরেকটু সহজ মনে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. https://www.forbes.com/health/body/calorie-calculator/
২. https://www.makeuseof.com/online-calorie-calculators-accurate/
৩. https://www.cdc.gov/healthyweight/assessing/bmi/adult_bmi/index.html#:~:text=Body%20mass%20index%20(BMI)%20is,weight%2C%20overweight%2C%20and%20obesity.
Comments