এক দিনে বেড়ানোর মতো ময়মনসিংহের ৭ স্থান

‘হাওর জঙ্গল মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং’ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত প্রাচীন এ শহরটি এক সময় পরিচিত ছিল এই প্রবাদ প্রবচনে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ময়মনসিংহ শহরকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।
ছবি: সংগৃহীত

ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তবে ভ্রমণ মানেই কি শুধু সমুদ্র আর পাহাড়? তা কিন্তু নয়। মন ভালো করে দেওয়ার মত চমৎকার প্রাকৃতিক শোভার দেখা মেলে দেশের নানা জেলায়।

ঢাকার অদূরে অবস্থিত বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। 'হাওর জঙ্গল মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং'- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত প্রাচীন এ শহরটি এক সময় পরিচিত ছিল এই প্রবাদে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ময়মনসিংহ শহরকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। এখানে বেড়াতে আসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এক দিনেই মোটামুটি সব জায়গা ঘুরে দেখা সম্ভব।

শশীলজ

ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে লাল ইটের একটি রাজবাড়ি। প্রতিষ্ঠাতা জমিদার সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই প্রাসাদের নাম রাখা হয় শশীলজ।

শশীলজ। ছবি: ফাবিহা বিনতে হক

রাজবাড়ীর প্রবেশদ্বারে রয়েছে সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন গ্রিকদেবী ভেনাসের মর্মর প্রতিমূর্তি। এই প্রাসাদে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। মূল ভবনের পেছনে রয়েছে স্বচ্ছ সাদা এক দ্বিতল ভবন, নাম জলঘর। ১৯৫২ সাল থেকে এই রাজবাড়িটি 'মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ' হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘর স্থাপনের জন্য ভবনটি অধিগ্রহণ করে। ২০১৯ সাল থেকে রাজবাড়ির অন্দরমহল জাদুঘর হিসেবে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে রাজমহলের মোট ১৮টি কক্ষের মধ্যে ৩টি কক্ষে রাজবাড়ির পুরাকীর্তি, রাজার ব্যবহার্য দুষ্প্রাপ্য জিনিস, আসবাবপত্র সংরক্ষণ করে রাখা আছে।

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

শশীলজ থেকে বের হয়ে ৫ মিনিট পায়ে হাঁটলেই দেখা যাবে দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি। প্রাসাদ নির্মাণে অনেক বেশি লোহা ব্যবহারের কারণে স্থানীয়দের কাছে 'লোহা কুঠির' নামেও পরিচিত এটি। শশীলজ ও এই প্রাসাদের নির্মাতা একজনই। মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে দ্বিতল প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

চীন থেকে আনা কারিগর দিয়ে নির্মিত আলেকজান্ডার ক্যাসেল নান্দনিকতা ও আভিজাত্যে পরিপূর্ণ। প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে মার্বেল পাথরের দুটো মূর্তি।

দৃষ্টিনন্দন এই পুরাকীর্তি দর্শন করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে লর্ড কার্জন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, কামাল পাশার মত বিখ্যাত ব্যক্তিরা। ভবনটি বর্তমানে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জয়নুল আবেদিন পার্ক

আলেকজান্ডার ক্যাসেল থেকে কিছু দূর গেলেই দেখা মিলবে ব্রহ্মপুত্র নদের। নদীর তীরের স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে অবস্থিত জয়নুল আবেদিন পার্ক ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম বিনোদনের স্থান। যারা নদীর বুকে ভেসে ওপারে যেতে চান, তাদের জন্যও আছে সারি সারি নৌকার ব্যবস্থা।  নদীর ওপারে ফুচকার দোকান, নাগরদোলা, হরেক রকম জিনিসপত্রের সমাহার দেখলে মনে হবে গ্রামীণ কোনো মেলায় চলে এসেছেন। পার্কের অন্য প্রান্তে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, যেখানে শিল্পীর আঁকা বিখ্যাত ছবি এবং তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা আছে। ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে সংগ্রহশালাটি ঘুরে আসতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

পার্কের ভেতর শিশুদের জন্য মিনি চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন রকম রাইডেরও ব্যবস্থা আছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১২০০ একর জায়গায়। পুরো ক্যাম্পাসটি একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব হবে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দেখতে চাইলে ক্যাম্পাসের বিশেষ কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। সূর্যমুখী ফুলের বাগান, বৈশাখী চত্বর, লিচু ও আম বাগান, টিএসসি, লেক, ফিশ মিউজিয়াম, কৃষি মিউজিয়াম, বিভিন্ন ফসলের খেত, মাছ চাষের পুকুর, গবাদি পশুর খামার, বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন দেখতে পারেন চাইলেই। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে সুলভ মূল্যে খাওয়ার জন্য চলে যান জব্বারের মোড়।

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি

ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি দর্শনার্থীদের কাছে বেশ পরিচিত। ময়মনসিংহ ঘুরতে গেলে শ্বেতশুভ্র প্রাসাদটি দেখতে ভুলবেন না। প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন, যা আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।  

রাজবাড়ির বিশাল ফটক পেরিয়ে ভেতরে গেলে একতল একটি ভবনের দেখা মিলবে। এখানে রয়েছে একটি রঙ্গমঞ্চ, রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের নির্মিত অসাধারণ ২ তলা রাজপ্রাসাদ আর রাণীর সুসজ্জিত অন্দরমহল। রাজবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরটির দেখা পাবেন প্রাসাদে প্রবেশের মুখেই।

ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে করে ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় মুক্তাগাছা যাওয়া যায়। এ ছাড়াও শহরের টাউন হলের সামনে থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও মুক্তাগাছা থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। লোকাল অটোরিকশা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।

জমিদার বাড়ির সামনেই আছে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের মণ্ডার দোকান। বিখ্যাত 'মুক্তাগাছার মণ্ডা' শুধুমাত্র এই দোকানেই পাবেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিখ্যাত এই মিষ্টান্ন না খেয়ে আসতে ভুলবেন না।

ছবি: স্টার

রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি

কালের বিবর্তনে প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধানের অভাবে ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার একাধিক জমিদার বাড়ির সঙ্গে রামগোপালপুর জমিদারবাড়িও এখন বিলুপ্তির পথে। তবে ধ্বংসাবশেষ দেখলে বোঝা যায় শৈল্পিক কারুকাজে অনন্য এই প্রাসাদ। রাজবাড়িতে নির্মিত চিড়িয়াখানা, বাগানবাড়ি, সাগরদিঘির কারুকার্যময় শানবাধাঁনো পুকুর ঘাট এখনো এই স্থানের ঐতিহ্য ও প্রাচুর্য ধরে রেখেছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশালের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। কবির স্মৃতি রক্ষার্থে ৫৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে আসতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ এলে যা খেতে ভুলবেন না

প্রত্যেক জায়গারই বিশেষ কিছু খাবার আছে, যা শুধু ওই এলাকারই সিগনেচার ডিশ। আগেই বলেছি মুক্তাগাছার মণ্ডার কথা। ময়মনসিংহ গেলে আরও খেতে পারেন জাকির মিয়ার টকমিষ্টি জিলাপি। ময়মনসিংহের জিলা স্কুল মোড়ে বিখ্যাত এই জিলাপি পাওয়া যায়। এটির বিশেষত্ব হলো, জিলাপি বানাতে তেঁতুল ব্যবহার করা হয়।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ শুঁটকি খেতে খুব পছন্দ করে। এখানে কুমড়া পাতায় চ্যাপা শুঁটকির পুর ঢুকিয়ে তেলে ভেজে এক ধরনের রান্না করা হয়। এই আইটেমের নাম 'চ্যাপার পুলি'। আপনি যদি শুঁটকি পছন্দ করেন, তবে এ খাবার আপনার জন্যই।

Comments

The Daily Star  | English
Personal data up for sale online!

Personal data up for sale online!

Some government employees are selling citizens’ NID card and phone call details through hundreds of Facebook, Telegram, and WhatsApp groups, the National Telecommunication Monitoring Centre has found.

13h ago