চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচন

হোটেলে থেকে একাই প্রচার চালাচ্ছেন রশিদ মিয়া

একাই লিফলেট বিতরণ করে নিজের জন্য ভোট চাইছেন রশিদ মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসছে। আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের তিন এলাকা—ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর—নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোট হবে। এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে একাই প্রচার চালাচ্ছেন নতুন রাজনৈতিক দল গণমুক্তি জোটের প্রার্থী রশিদ মিয়া। নিজের দলের নিবন্ধন না থাকায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী লড়াইয়ে তিনি যেন 'ওয়ান ম্যান আর্মি'।

রশিদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। নির্বাচনী প্রচার চালাতে চট্টগ্রামে একটি হোটেলে উঠেছেন তিনি। এর মধ্যে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবু প্রচারণায় যাওয়া থেকে বিরত থাকেননি একদিনের জন্যও। তার ভাষ্য, 'অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে অসুস্থ শরীর নিয়েও ভোটারদের মন জয় করতে প্রচারণা চালাচ্ছি।'

স্থানীয়দের মধ্যেও রশিদের ব্যাপারে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। কারণ, তিনি একাই ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন করছেন, কুশল জানতে চাইছেন।

রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের রাস্তা-ঘাট কিছুই তিনি চিনতেন না তিনি। এই শহরে তার কোনো বন্ধু বা স্বজনও নেই। এরপরও নির্বাচন করার উৎসাহ হারাননি।

লিফলেট হাতে রশিদ নিজেই প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায়, এ গলি থেকে ওই গলি। তিনি কথা বলছেন স্থানীয় রিকশাচালকের সঙ্গে, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এমনকি রাস্তার ভিক্ষুকের সঙ্গেও। পথচারীদের হাতে লিফলেট দিয়ে নিজের জন্য ভোট চাইছেন।

এই নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র ও দলীয় চার জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

বুধবার পর্যন্ত অনেক প্রার্থী এলাকায় কোনো পোস্টার সাঁটাননি। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুল আলম জানান, ভোট চাইতে তিনি ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা তার প্রচারণায় কেন অনুপস্থিত জানতে চাইলে শামসুল বলেন, এর কারণ তিনি জানেন না।

তিনি বলেন, 'আমি সত্যিই জানি না কেন দলের নেতারা আমার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। আমি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাইনি।'

শামসুল বলেন, 'এই নির্বাচনী এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি যদি দলের পূর্ণ শক্তি কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে এখানে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারতাম।'

ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, 'ভোটের আগের রাতে ভোট হয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে ভোটাররা চিন্তিত।'

জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দীপক কুমার পালিত তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, কারণ তার দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়।

বুধবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার কোথাও তার পোস্টার দেখা যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে দীপক বলেন, তিনি কিছু কৌশল প্রয়োগ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আমাকে কৌশলী হতে হবে। আমি প্রচারণার জন্য দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।'

পোস্টার সাঁটাননি কেন জানতে চাইলে বলেন, তিনি ১৮০টি ব্যানার টাঙিয়েছেন ও ২৫ হাজার পোস্টার ছাপিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হবে।

স্থানীয়দের মতে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায়, এমনকি বিএনপির কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় স্বস্তিতে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছেন এবং তিনি নিজের বিজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

তিনি বলেন, 'এ আসনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করা।'

তিনি বলেন, 'কখনও কখনও দেখা যায়, উপনির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ বোধ করেন না। সুতরাং ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।'

চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। এখানে ১৫৬টি ভোটকেন্দ্রের ২০১টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট হবে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে ।

গত ২ জুন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের এই আসনটি শূন্য হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Rampal fouling 2 Sundarbans rivers

The Rampal power plant began operation in late 2022 without an effluent treatment plant and has since been discharging untreated waste into the Pasur and Maidara rivers next to the Sundarbans.

4h ago