ভেষজ ওষুধের বাজারে বড় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ছে

ভেষজ ওষুধ, ওষুধ,স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, একমি, নেপচুন ল্যাবরেটরিজ, শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেড,

বাংলাদেশের বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ভেষজ ওষুধের ক্রমবর্ধমান বাজারের দিকে ঝুঁকছে।

এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, ভেষজ ওষুধের প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, ফলে এই ওষুধের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। কারণ, ভেষজ চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ও বিভিন্ন রোগের চিকিত্সায় কার্যকর বলে ক্লিনিকালি প্রমাণিত হয়েছে।

কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, ভেষজ ওষুধের বাজার থেকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। যা সামগ্রিক ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের আয়ের এক-দশমাংশ।

বর্তমানে স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা ও একমির মতো শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেষজ ওষুধের চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ করে। আর এই খাত থেকে তারা প্রতি বছর ৮০০ কোটি টাকা আয় করে।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) হাবিবুর রহমান বলেন, গত এক দশক ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ভেষজ ওষুধের চাহিদা বছরে ৩০ শতাংশ হারে বেড়েছে। ভেষজ ওষুধ উৎপাদনের বড় সুবিধা হলো প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা যায়।

তিনি জানান, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা ভেষজ ওষুধের সংখ্যা হয়তো কম, কিন্তু ব্রান্ডের প্রতি মানুষের আস্থা থাকায় এসব ওষুধের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মতো সব ধরনের ভেষজ ওষুধ স্থানীয় বাজারে ছাড়ার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) ছাড়পত্র নিতে হয়।

এসিআই হেলথকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মহিবুজ জামান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। তাই অনেক ওষুধ কোম্পানি এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই ওষুধের নতুন ফর্মুলা বের করতে নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র গঠন করেছে।

তিনি বলেন, 'শিগগিরই ভেষজ ওষুধের জন্য আলাদা প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। মানুষ ধীরে ধীরে ভেষজ ওষুধে আগ্রহী হচ্ছে। এর কারণ ওষুধ কোম্পানিগুলো এখন এই বিভাগে বিনিয়োগ করছে।'

একমি ল্যাবরেটরিজের অতিরিক্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসিবুর রহমান বলেন, 'ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ব্র্যান্ড ভ্যালু ও মানের জন্য ভেষজ ওষুধ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা পাশ্চাত্য ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা মেনে চলি এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করি।'

হাসিবুর মনে করেন, দেশ ও বিদেশের ভেষজ ওষুধের বাজারে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা আছে, কারণ এই প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইউনানি ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সালে ভেষজ ওষুধের বার্ষিক বিক্রি রেকর্ড ১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছিল।

সামগ্রিকভাবে গত ১২ বছর ধরে ভেষজ ওষুধের বাজার বছরে প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি উভয় ওষুধই প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ভেষজ ওষুধ।

নেপচুন ল্যাবরেটরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশে কমপক্ষে ৩২০টি ইউনানি ওষুধ কোম্পানি আছে এবং প্রায় ২২০টি কোম্পানি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করে।

ইউনানি হলো পার্সো-আরবি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ, যা মুসলিম সংস্কৃতিতে প্রচলিত এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার শিকড় ভারতীয় উপমহাদেশে।

সিদ্দিকী বলেন, বাজার ধরতে বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো ভেষজ ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে, ডিজিডিএ নিবন্ধন দিলেও পুরনো কোম্পানিগুলোর ব্যাংক ঋণের সুযোগ না থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

চট্টগ্রামের ভেষজ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সিংহ বলেন, মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় ভেষজ ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'মানুষ সুস্থ থাকতে প্রাকৃতিক পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে, ফলে ভেষজ ওষুধের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।'

ডিজিডিএ'র প্রাক্তন অতিরিক্ত মহাপরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোম্পানি ভেষজ ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি নিয়েছে।

তিনি জানান, ভেষজ ওষুধ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও ফলপ্রসূ শিল্প, তাই এর উন্নয়নে ডিজিডিএ সহযোগিতা করছে। তবে, বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ভেষজ ওষুধের বাজার দখল করছে, তারা ঐতিহ্যবাহী কোম্পানিগুলোকে কোনো ছাড় দিচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

7h ago