৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি কৃষি মার্কেটের আগুন, সমন্বয়ের অভাব-পানি সংকট

জমে থাকা পানি ছোট ছোট বালতিতে করে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুন ৫ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে।

পানির সংকট থাকায় তাদের সঙ্গে বিমান বাহিনীর একটি দল যোগ দিয়েছে।

মার্কেটের ভেতরের দোকানের আগুন নেভাতে পাইপ স্থাপনের কাজ চলছে। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে বিমান বাহিনীর সদস্য হাবিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিমান বাহিনী ৪ গাড়ি পানি নিয়ে আসছে। 

'কিন্তু এখানে ঢোকার মুখে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় এবং রাস্তাও যথেষ্ট সরু। তাই গাড়িগুলো মার্কেটের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না।'

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক জানান, ফায়ার সার্ভিসের পানি শেষ হয়ে গেছে। ভোরে ব্যবহৃত পানি মার্কেটের আশেপাশে জমে আছে এবং সেখান থেকে ছোট ছোট বালতিতে করে পানি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।

একটি কাপড়ের দোকানের শাটার ভেঙে ভেতরে এখনো আগুন দেখা যায়। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে যায় পুরো মার্কেটে।

মার্কেটের টিনশেড অংশের মুদি, কসমেটিকস, কাপড়, ক্রোকারিজ, ঘড়ি, জুতা ও স্বর্ণের প্রায় সব দোকান পুড়ে গেছে। উপর থেকে ছাদ ধসে না পড়লেও, মার্কেটের সবগুলো দোকান চারপাশ থেকে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

পুড়ে যাওয়া দুটি কসমেটিক্সের দোকানের মালিক মার্কেটের সামনে অসহায় হয়ে বসে আছেন। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

মার্কেটের ৩টি অংশ মাছ বাজার, মুদির দোকান এবং ক্রোকারিজ ও তৈজসপত্রের দোকান। এছাড়া বাইরের খোলা জায়গায় কাঁচাবাজার ও ফলের দোকান। মার্কেটের ভেতরের দোকানের পাশাপাশি খোলা জায়গায় পলিথিনে মোড়ানো সবজি ও ফলও পুড়ে গেছে। কিছুই অক্ষত নেই দোকানের মালামালের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত দোকান থেকে মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

তবে দোকানের শাটার ভেঙে ভেতরে ঢুকলেই আগুন দেখা যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অসহায় অবস্থায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে কিংবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

মালামাল উদ্ধারে শাবল দিয়ে দোকান ভাঙার চেষ্টা করছেন দোকানদার। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

একটি কাপড়ের দোকান মালিককে দেখা গেল তার দোকানের শাটার ভাঙতে। ভেঙে ভেতরে দেখলেন তখনও আগুন। পানি দেওয়ার জন্যে ফায়ার সার্ভিসকে খুঁজে না পেয়ে রাস্তায় জমে থাকা পানি বালতিতে তুলে আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।

মার্কেটের আশেপাশে হাজার-হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তাদের ঠেলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা জানান, আগুন লাগার পরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে আশেপাশের এলাকা থেকে তারা পানি সংগ্রহ করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। পরে ধীরে ধীরে পানি সরবরাহ কমে আসে।

ক্রোকারিজ ও তৈজসপত্রের দোকানের ভেতরে সব পুড়ে গেছে আগুনে। রাতে কয়েকটি চেয়ার, কিচেন র‍্যাক প্লাস্টিকে ঢেকে মুড়িয়ে রেখে গিয়েছিলেন দোকানের বাইরে। সেগুলো অক্ষত পেয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন দোকানদার। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো। 

সেখানে দেখা হয় কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোরে আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস এখানে কাজ করলেও, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আগুন নির্বাপণে দেরি হচ্ছে। বাইরে থেকে আগুন নিভে গেলেও দোকানের ভেতরগুলো এখনো পুড়ছে। সকাল থেকে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।'

তিনি জানান, এ মার্কেটের ৩টি অংশে প্রায় ৫০০ দোকান। এর মধ্যে কাঁচাবাজারের অংশটি ছাড়া বাকি অংশগুলোর প্রায় ৪০০ দোকান আগুনে পুড়ে গেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Muslim pilgrims pray at Mount Arafat in hajj apex

Thousands of pilgrims began to gather before dawn around the hill and the surrounding plain

1h ago