আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

বোলারদের সৌজন্যে জয়ে বিশ্বকাপ শুরু পাকিস্তানের

শুরুটা দারুণ করলেও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বোলারদের দাপটে কুলিয়ে উঠতে পারেনি নেদারল্যান্ডস।

বোলারদের সৌজন্যে জয়ে বিশ্বকাপ শুরু পাকিস্তানের

পাকিস্তান বনাম নেদারল্যান্ডসপাকিস্তান বনাম নেদারল্যান্ডস

ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। ব্যাটিং স্বর্গে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গেও তিনশ রান করতে পারেনি। তার উপর লক্ষ্য তাড়ায় নেদারল্যান্ডসের সূচনাটা ছিল ভীতি জাগানিয়া। তবে এরপর দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন পাক বোলাররা। ফলে কোনো অঘটন হয়নি। কাঙ্ক্ষিত জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে পাকিস্তান।

শুক্রবার হায়দারাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে ভারত বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৮১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২৮৬ রান করে অলআউট হয়ে যায় তারা। তবে ডাচদের ৪১ ওভারে ২০৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল।

মাঝে দুটি আসরে সুযোগ না পাওয়ায় এবার ১২ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসে নেদারল্যান্ডস। শক্তি ও সামর্থ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ছিল যোজন যোজন পার্থক্য। তার উপর বিশ্বকাপে কখনোই টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে জয় পায়নি তারা। দুটি জয় স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু তারপরও পাকদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল তারা। কেবল অভিজ্ঞতার কারণেই হারতে হয়েছে তাদের।

২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় এক পর্যায়ে ডাচদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১২০ রান। কিন্তু এরপর ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। বিশেষকরে হারিস রউফের করা ২৭তম ওভারে জোড়া ধাক্কায় পিছিয়ে পরে নেদারল্যান্ডস। পাকিস্তানের সব বোলারই পেয়েছেন উইকেট। তবে ৪৩ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রউফ। এছাড়া ২টি শিকার হাসান আলীর।

রান তাড়ায় ম্যাক্স ও'ডয়েড ও কলিন অ্যাকারম্যান তেমন কিছু করতে না পারলেও বিক্রমজিত সিংয়ের ব্যাটে ম্যাচেই থাকে ডাচরা। দলীয় ৫০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর বাস ডি লিডের সঙ্গে ৭০ রানের দারুণ একটি জুটি গড়েছিলেন এই ওপেনার। তবে শাদাব খানের বলে হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন বিক্রমজিত। এরপর রউফের সেই জোড়া ধাক্কায় বড় চাপে পড়ে যায় দলটি। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।

তবে এক প্রান্ত আগলে বাস ডি লিড আশা ধরে রেখেছিলেন নেদারল্যান্ডসের। নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে রানের চাকা সচলও রেখেছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ নাওয়াজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে থাকে তার প্রতিরোধ। কার্যত তখন থেকেই হার দেখতে শুরু করে দলটি। এরপর শেষ দিকে লোগান ফন বিকের ইনিংস কেবল হারের ব্যবধান কমায়।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ডি লিড। ৬৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। বিক্রমজিতের ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান। ৬৭ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ২৮ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ রান করেন ফন বিক।  

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৩৮ রানেই টপ অর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। ১৫ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি। আরও একবার ব্যর্থ হন ওপেনার ফখর জামান। লোগান ফোন বিকের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ওপেনার। গত এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর থেকেই বাজে সময় পার করছেন তিনি। ১৫ বলে ১২ রান করেন আসে তার ব্যাট থেকে।

তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক বাবর আজমও। ডাচ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে উইকেটে নেমেই রানের জন্য হাঁসফাঁস করছিলেন তিনি। পরে অ্যাকারম্যানের বলে স্লগ করতে গেলে শর্ট মিডউইকেটে ধরা পড়েন সাকিব জুলফিকারের হাতে। ১৮ বলে করেন ৫ রান। আর পল ফোন মিকেরিনের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে সীমানায় আরিয়ান দত্তের ক্যাচে পরিণত হন আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক। ফলে বড় বিপদে পড়ে যায় তারা।

এরপর সাউদ শাকিলকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১২০ রানের জুটি গড়ে চাপ সামলে দলকে বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু হুট করেই যেন ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। আরিয়েনের বলে সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে হেরফের করে শূন্যে তুলে বিদায় নেন শাকিল। তার ব্যাট থেকে আসে ৬৮ রান। ৫২ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।

এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রিজওয়ানও। বাদ ডি লিডের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ঘোরাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তার ব্যাট থেকেও আসে ৬৮ রান। ৭৫ বলে ৮টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। এরপর ইফতিখার আহমেদ (৯) জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দিতে গিয়ে সাজঘরে ফিরলে ফের চাপে পড়ে যায় দলটি।

ফের দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর শাদাব খানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। এ দুই ব্যাটার যখন খেলছিলেন তিনশ রান মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। ৬৪ রানের এ জুটি ভাঙেন ডি লিড। ব্যক্তিগত ৩২ রানে শাদাব খানকে বোল্ড করে দেন তিনি। পরের বলে হাসান আলীকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ডি লিড। এরপর নাওয়াজ রানআউট হলে তিনশ রান স্বপ্নই থেকে যায় পাকিস্তানের জন্য। নাওয়াজ ৩৯ রান করেন।

নেদারল্যান্ডসের পক্ষে ৬২ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান ডি লিড। ২টি শিকার অ্যাকারম্যানের।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

7h ago