কক্সবাজারে শান্তিপূর্ণ ভোটে গণতন্ত্রের পাঠ নিল শিশুরা, করল নেতা নির্বাচন

কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছে এক শিশু। ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে মাঠে নামছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, বাড়ছে সহিংসতার শঙ্কা, তখন ব্যতিক্রমী ও শান্তিপূর্ণ এক ভোটপর্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করল কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিশুরা।

গতকাল শনিবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে বাহারছড়া শিশু ইউনিয়ন পরিষদের এই প্রতীকী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই ভোটে মোট ২৫ শিশু প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল চার হাজার ১২৫। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ছিল ১৬ কিশোরী ও পাঁচ কিশোর।

এই নির্বাচনে ভোটপর্ব মেটে শান্তিতেই। ফলের পর নির্বাচিত হয় শিশু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড চেয়ারম্যান। কঠোর নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে চলে ভোটগ্রহণ। স্বস্তিতে দায়িত্ব পালন করেন পোলিং এজেন্ট, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষরা।

কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গতকাল শনিবার আটটি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৩টায়। পরে ভোটগণনা শেষে ঘোষণা করা হয় ফলাফল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাহারছড়া ইউনিয়নের ২৫২টি শিশু পরিষদের কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন শিশু পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে এ নির্বাচন আয়োজন করা হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ও অ্যাকশন ম্যাডিও'র আর্থিক সহযোগিতায় 'কিশোর-কিশোরী এবং প্রবীণদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন প্রকল্পের' আওতায় জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে সম্পন্ন হয় এই নির্বাচন।

কেন্দ্রের বাইরে শিশু ভোটারদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজকদের ভাষ্য, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়ে শিশুরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের নেতা হিসাবে  ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে। ভোটে চেয়ার প্রতীক নিয়ে তাসলিমা মুনির রিতা ৭৪৮ ভোট পেয়ে ইউনিয়ন শিশু পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাতা প্রতীকের ওমর ফারুক পায় ৭০৭ ভোট।

এছাড়া আটটি ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়- দোয়াত-কালি প্রতীকের মিনা আকতার, টেলিভিশন প্রতীকের মোহাম্মদ আলমগীর, মোরগ প্রতীকের আহসান মোহাম্মদ রাব্বী, বই প্রতীকের মেহের আফরোজ মুনা, মোরগ প্রতীকের মোহাম্মদ শরিফ, মোরগ প্রতীকের আজিজা আলিম পুষ্পা, বই প্রতীকের নজরুল ইসলাম এবং আহম্মদ।

এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফজলুল করিম। রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন প্রভাষক নার্গিস আকতার রনি। সহকারী নির্বাচন কমিশনার ছিলেন ফরিদুল আলম বাহারী ও জাকের হোসেন।

পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন-এ্যাকশন ম্যাডিও'র প্রকল্প ব্যবস্থাপক শারাহ ওয়িস ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মসূচি সমন্বয়কারী সুলতান মাহমুদ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার শিক্ষাবিদ ফজলুল করিম বলেন, 'শিশুরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়ে তাদের পছন্দমত নেতা নির্বাচন করেছে। শিশুরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে শ্রদ্ধা জানাতে শিখেছে, পরমতের প্রতি সহনশীল হতে শিখেছে। তারা জয়-পরাজয় মেনে একে অপরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। তাদের দেখে অন্যরা শিখবে। এভাবে তাদের মধ্যে বিকল্প যোগ্য নেতা তৈরি হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই প্রক্রিয়ায় শিশুরা বড় হলে একদিকে তারা যেমন নিজেদের আরও যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবে তেমনি বড় হয়ে তারা যে জায়গায় কাজ করবে সেখানেও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।'

নির্বাচিত ইউনিয়ন শিশু পরিষদের চেয়ারম্যান তাসলিমা মুনির রিতা বলেন, 'একদম শিশু বয়স থেকে নেত্বত্ব দেয়ার যে সংকল্প ছিল তা আজ পূরণ হয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ও উন্নয়নের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে এগিয়ে নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, ইভিটিজিং প্রতিরোধ ও অসহায়-গরিবদের সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে।'

নির্বাচিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফা আলম সুইটি বলেন, 'এ নির্বাচন ভবিষ্যত প্রজন্মকে গণতন্ত্রের বিষয়ে শিক্ষা দিবে। আজকের শিশুরাই আগামীতে সমাজ ও দেশের নেত্বত্ব দেবে। ব্যালটবিপ্লব এখান থেকে শুরু করলে আগামীতে সবখানে সব নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Rohingya influx: 8 years on, repatriation still elusive

Since the repatriation deal was signed with Myanmar in November 2017, Bangladesh tried but failed to send Rohingyas back.

11h ago