শিশু কারো সঙ্গে মিশতে চায় না, করণীয় কী

ছবি: সংগৃহীত

শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে তার সামাজিক বিকাশও জরুরি। কিন্তু অনেক শিশু সামাজিক এ বিষয়টিতে ততটা আগ্রহী হয় না। পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারলেও পরিবারের বাইরে একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে যায়। শিশুর এই মিশতে না পারা বাবা-মার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে কী করণীয় সেই পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জি।  

শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জি বলেন, 'শিশুরা কারো সঙ্গে মিশতে না চাইলে তা অভিভাবকদের জন্যে বেশ বিড়ম্বনার কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা পরিবারের একমাত্র সন্তান, এই সমস্যাটি তাদের বেশি হয়ে থাকে। খেলার সময় তারা হয় পরিবারের কারো সঙ্গে খেলে, নয়তো একা একা। এভাবে একা থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শিশুরা বাইরের কারো সঙ্গে মেশা তো দূরের কথা, দেখা করতেও ভয় পায়।'

শিশুদের কারো সঙ্গে না মেশার কারণ হিসেবে মনোবিদ শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জি বলেন, 'সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে ছাড়তে হয়, যাতে তার সামাজিকীকরণ, সামাজিক বিকাশ সঠিকভাবে হয়। বাবা-মা বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হলে শিশুরা বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে ভয় পায়। তারা সহজে তার সমবয়সী শিশুকে বিশ্বাস করতে পারে না। তাছাড়া শিশুটি কী বিশেষভাবে কোনো ব্যক্তিকে ভয় পাচ্ছে কি না, তার আচরণ থেকে বাবা-মাকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে।'

'শিশুর কারো সঙ্গে মিশতে না পারার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ডিভাইস আসক্তি। আজকাল বাচ্চাদের মোবাইলে কার্টুন দেখিয়ে খাওয়ানো হয়, দুষ্টুমি করলে তাদের কার্টুন দেখিয়ে শান্ত করা হয়। আপনার সন্তানের যদি মোবাইলের প্রতি আসক্তি থাকে, তবে নিশ্চিতভাবেই সে বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে চাইবে না। কারণ তার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে মোবাইল', যোগ করেন তিনি।

এই পরিস্থিতি সামলে নিতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো-

শিশুকে ছাড়তে হবে

বাচ্চারা হামাগুড়ি শেখার পর যেভাবে তাদের মাটিতে ছেড়ে দেওয়া হয় হাত-পা নেড়ে খেলে বেড়াবার জন্য, অন্যের সঙ্গে মেশার বেলায়ও তাই করতে হবে। শিশুকে কারো সঙ্গে খেলতে দিয়ে বারবার নজরদারি করা যাবে না সে কীভাবে খেলছে। শিশু যদি নাও খেলে তাকে অন্য শিশুর সঙ্গে বসিয়ে রাখুন, তাকে অন্য বাচ্চা সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলুন।

অতিরিক্ত সুরক্ষিত করতে যাবেন না

অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে সুরক্ষিত রাখা আপনার দায়িত্ব। কিন্তু তাকে অতিরিক্ত সুরক্ষিত রাখতে গেলে এটি তার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক সময় বাবা-মা ইচ্ছা করে কারো কোলে দিতে চান না, কারো সঙ্গে খেলতে দিতে চান না। কিন্তু বাচ্চার একটু বয়স বাড়তে থাকলে তারাই আবার দুশ্চিন্তা করেন শিশু কেন কারো সঙ্গে মিশছে না। শিশুকে অন্যের সঙ্গে মিশতে দিন, খেলা করতে দিন। এভাবে মিশতে মিশতে অভ্যাস রপ্ত হয়ে যাবে।

মানসিক আঘাত আছে কি না খেয়াল করুন

অনেক সময় শিশুর বাইরে কারো সঙ্গে মেশার পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো হয় না। হয়তো সে ব্যথা পেয়েছে বা ভয় পেয়েছে কোনো কারণে। এমনটা হলে তাকে আশ্বস্ত করুন সবসময় একই ঘটনা ঘটবে না। তবে তার মানসিক আঘাতকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে না করলে সে আরও ভীত হয়ে যাবে।

অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না

শিশুকে কোনো অবস্থাতেই অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এতে তার মনে হবে, বাবা-মার কাছে ওই শিশুটিই বেশি পছন্দের। নিজের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। আত্মবিশ্বাস কমে গেলে বাইরের মানুষের সঙ্গে মেশার আগ্রহ আরও কমে যায়।

আগ্রহ/ সম্ভাবনার জায়গা খুঁজে বের করুন

আপনার শিশুটি কোন বিষয়ে বেশি আগ্রহী সেটি খুঁজে বের করলে তাকে বোঝা সহজ হবে। যেমন- শিশু ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহী হলে তার ছবির প্রতি আগ্রহ দেখান। বাসায় কেউ বেড়াতে এলে তাদেরও বলবেন, শিশু যা খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বা যে বিষয়ে আগ্রহী তা নিয়ে গল্প করতে। এতে করে শিশুর সামাজিক বিকাশ সঠিকভাবে হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

4h ago