ক্রিকেটবিহীন দিনে প্রকৃতিই নিষ্কৃতি

এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম চার ম্যাচের তিন ভেন্যুতেই প্রকৃতির এমন বিশালতা। ধর্মশালায় ধৌলাধর পাহাড়ের শুভ্র আবেশের পর চেন্নাইতে খেলা ছিল বঙ্গোপসাগরের তীরে। পুনেতে এসেও মিলল পাহাড়ের দেখা। মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চলটা পাহাড়ি হলেও শহরটা সমতল। তবে চারপাশেই আছে পাহাড়।

পুনে থেকে

ক্রিকেটবিহীন দিনে প্রকৃতিই নিষ্কৃতি

বিশ্বকাপ ২০২৩

গোরাদেশ্বর পাহাড়ের ঠিক কোল ঘেঁষে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। তার পাশ দিয়েই চলে গেছে পুনে-মুম্বাই হাইওয়ে। পাহাড় ঘেরা পথ ধরে এগোলে চলে যাওয়া যায় লোনাভালা, খান্ডালার মতন বিখ্যাত নয়নাভিরাম পর্বত চূড়ায়। ক্লান্তি, অবসাদ কিংবা মনের ভেতর জমে থাকা বিষাদের স্তূপ ঝেড়ে ফেলতে এমন প্রকৃতি খুবই অনুকূল।

এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম চার ম্যাচের তিন ভেন্যুতেই প্রকৃতির এমন বিশালতা। ধর্মশালায় ধৌলাধর পাহাড়ের শুভ্র আবেশের পর চেন্নাইতে খেলা ছিল বঙ্গোপসাগরের তীরে। পুনেতে এসেও মিলল পাহাড়ের দেখা। মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চলটা পাহাড়ি হলেও শহরটা সমতল। তবে চারপাশেই আছে পাহাড়।

চাইলেই দুরন্ত কোনো পথ ধরে উঁচুতে উঠে নিজেকে আলাদা করে নেওয়া যায়। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এরকম প্রকৃতির টানে বিভোর কিনা বোঝা মুশকিল! ধর্মশালায় কয়েকজন ক্রিকেটারকে ক্যাবল কারে চড়তে দেখা গেছে একবার। এমনিতে অবশ্য তাদের ফাঁকা সময়ে ঘুরে বেড়ানোর খুব একটা সুখ্যাতি নেই।

Lonavala
ছবি: একুশ

সময় অবশ্য ছিল। এবার বিশ্বকাপে ম্যাচ ডের বাইরে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন একদম সীমিত। পুনেতে এসে তো মিলেছে তিন দিনের ছুটি। রেস্তোরায় খাওয়া-দাওয়া আর শপিং করার পর বাকি সময়টা তারা পার করেছেন হোটেলবন্দি থেকে। তার মাঝে অবশ্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে ছুটির আমেজ থেকে।

খবরের খোরাকে দলের পিছু আসা সাংবাদিকরা এসব ছুটির তালে পড়েন বিপাকে। খবরের খরায় চিন্তা তৈরি হয় সবারই। সাংবাদিকদের দেখে লিটন দাসের হোটেল লবিতে নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকা এবং তারপরের উত্তপ্ত হাওয়া সেই খরা অনেকটা লাঘব করেছে বটে, তবে বাংলাদেশ দলের গুমোট পরিস্থিতি তাতে আরও প্রবল হওয়ার কথা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পেশিতে টান পেয়েছেন। তার বাম পায়ের আড়ষ্ট মাংসপেশির মতন যেন গোটা দলের আবহ! হয়তো প্রকৃতিই পারে এই অস্বস্তি থেকে নিষ্কৃতি দিতে।

Khandala
ছবি: একুশ

পুনেতে গত শনিবার ভোরে এসে এখনো স্টেডিয়াম দেখা হয়নি। আসলে দেখার সুযোগই ছিল না। সোমবার পর্যন্ত সংস্কার কাজ চলমান থাকায় ভেন্যুতে প্রবেশাধিকার ছিল না গণমাধ্যমের। নেহেরু স্টেডিয়াম বলে মূল শহরে আরেকটি মাঠ আছে। যেখানে আগে খেলা হতো, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে যে মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল কেনিয়া। না, সেই মাঠে কেউ অনুশীলন করছে এমন না।

ভারতীয় দলও শহরে এসে বিশ্রামেই পার করছ। বিরাট কোহলি সরাসরি পুনে না এসে গেছেন মুম্বাইতে। দুই ম্যাচের মাঝে লম্বা সময় সবাইকেই একটু ক্রিকেটবিহীন থাকার ফুরসত দিয়েছে আর কি।

এই ফাঁকে লোনাভালা, খান্ডালার পাহাড়ে বেরিয়ে পড়ার সুযোগ মিলল আমাদেরও। পুনে-মুম্বাই মসৃণ হাইওয়ে দেখলে মনে হবে, পাহাড় ঘিরে তা কত যত্ন করে বানানো। মাঝে মাঝেই পাথুরে পাহাড়ের টানেলে প্রবেশ করছে গাড়ি, বের হয়ে আবার দেখা মিলছে ন্যাড়া পাহাড়ের অবারিত দিগন্ত।

Pune-Mumbai Highway
ছবি: একুশ

হেমন্তের এই সময়ে প্রকৃতি একটু শুষ্ক। বেশিরভাগ ঝর্ণায় নেই পানি। তবে চূড়ায় উঠলে নীলচে আভার হাতছানি দূরে কোথাও নিয়ে চলে যায় মন। পাহাড়ের গায়ে সাপের মতন আঁকাবাঁকা পথের কাঠামো জানান দেয়, পাহাড় মানেই দুর্গম অঞ্চল নয়। চাইলে এখানে অতি সহজে উপরে উঠে যাওয়া যায়।

বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি বিশাল হার বিপর্যস্ত করে রেখেছে সাকিবদের। আগামী বৃহস্পতিবার যে দলের বিপক্ষে খেলা সেই স্বাগতিক ভারতের অবস্থা একদম বিপরীত। তিন ম্যাচের সবগুলোতেই তারা দেখিয়েছে দাপট। ভারতকে হারিয়ে কক্ষপথে ফেরা বাংলাদেশ দলের জন্য আপাতত ভীষণ দুর্গম। তবে একটা মজবুত কাঠামোর রাস্তা পেয়ে গেলে দুর্গম উচ্চতা পেরুতেও তো ঝক্কি লাগে না! আর উচ্চতায় উঠলে দিগন্তে যে আভা পাওয়া যায়, কে না জানে সমস্ত ভারী হাওয়া তাতে মিইয়ে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

1h ago