টানা ২১ মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ঢাকায় এক ঠিকাদারের অধীনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের পর কাঠমিস্ত্রির আবদুল খালেক আয় করেন ৫০০ টাকা। এই আয় তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ মেটাতে যথেষ্ট নয়।

অতিরিক্ত ২৫০ টাকা পেতে তাকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি বাড়তি শ্রম দিতে হয়। তারপরও, তার পক্ষে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই সময়ে এই টাকা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানো কঠিন।'

তিনি আরও বলেন, 'পরিবারের খরচ মেটাতে প্রতি মাসে আমাকে টাকা ধার করতে হয়। গত মাসে দুই হাজার টাকা ধার করেছি। সবকিছুর দাম বাড়তি। অথচ আয় সেভাবে বাড়েনি। গত ছয় মাস আগে আমার মজুরি বেড়েছিল মাত্র ৫০ টাকা।'

মিরপুরের ৬০ ফিট রোডের মেসে থাকেন লেগুনাচালক মজনু মিয়া। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খরচের ভয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসার সাহস হয় না।'

গতকাল মঙ্গলবার দেখা গেছে মজনু তার ভাড়া করা লেগুনা চালাচ্ছেন হেলপার ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, 'হেল্পারকে প্রায় ৪০০ টাকা দিতে হয়। এরপর গাড়ির মালিককে আরও প্রায় এক হাজার ৩০০ টাকা দেওয়ার পর যা থাকে তা আমার ও পরিবারের জীবন চালানোর জন্য যথেষ্ট না।'

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

সেই রুটে লেগুনা হেল্পার রাজীব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন কাজ পাওয়া কঠিন। গণ্ডগোল থাকলে তা আমাদের অনেক ক্ষতি হয়।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবরে নিম্ন ও অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে সাত দশমিক ৬৯ শতাংশ। সেই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৯৩ শতাংশ। সেই হিসাবে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির তুলনায় দুই দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির হার ও মজুরি বৃদ্ধির হারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান নিম্ন আয়ের ও অদক্ষ শ্রমিকদের জীবনযাত্রার খরচ কমাতে বাধ্য করছে।

জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল লেবার অফিসের কর্মসংস্থানবিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় দুই বছর ধরে প্রকৃত মজুরি কমছে।'

'এটা উদ্বেগের বিষয়,' বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে দুর্দশা কেবল কম আয়ের মানুষদেরই নয়, নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষদেরও দুর্দশায় ফেলেছে।'

'মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে সাধারণত সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।'

'পণ্যের বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে—এমন ধারণা সবসময় সত্য নাও হতে পারে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দেশে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি এর একটি উদাহরণ হতে পারে।'

তার মতে, 'সুদের হার বাড়িয়ে দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হবে। সরবরাহ ব্যবস্থাপনাটি গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি যত দ্রুত সম্ভব সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, 'গত দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা অন্যতম কারণ।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষি মন্ত্রণালয় আলু, চাল, পাটসহ ১৫ পণ্যের উৎপাদন খরচ নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে।'

এতে দেখা যায়, খুচরা বাজারে পৌঁছানোর সময় পণ্যগুলোর দাম কমপক্ষে চারগুণ ও সর্বোচ্চ ১৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তার মতে, 'এ ধরনের একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোথাও নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Jamaat welcomes polls timeline, criticises Yunus for skipping dialogue before announcement

Expected chief adviser to hold discussions with parties regarding announcing the election timeline, it says

3h ago