নৌকার প্রচার মাইকের আওয়াজ শুনলেই লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি 'আমরা আর মামুদের' একদলীয় ডামি নির্বাচন ঘিরে একদিকে চলছে রীতিমত রঙ-তামাশা, আর অন্যদিকে নৌকা-ডামির কামড়া-কামড়ি।

তিনি বলেন, গোলাগুলি, খুনোখুনি, সংঘাত-সহিংসতায় জনপদগুলো বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সবখানে।

'পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের এই নির্বাচনে ভোটারদের ন্যূনতম আগ্রহ নেই' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'গণতান্ত্রিক বিশ্বকে তথাকথিত ভোটের উৎসব দেখানোর জন্য অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে তাদের রেহাই নেই। সাধারণ মানুষকে জোর করে মিছিলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এলাকা ছাড়া করার ভয় দেখানো হচ্ছে। নৌকার প্রচার মাইকের আওয়াজ শুনলেই লোকজন সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, ভোটের উৎসবের বদলে আতঙ্ক। 

'দেশ এখন আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রযন্ত্রকে নামানো হয়েছে "আমি আর ডামি"র ভোটরঙ্গে। সরকারি কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী-ডামি মিছিল বের হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলছেন, "এই নৌকা নূহ নবীর"। আর তার ডামি পক্ষ বলছেন, "নৌকা পাগলদের মার্কা"। বিভিন্ন স্থানে ভোট কিনতে প্রকাশ্যে টাকা বিলি করা হচ্ছে।'

'আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্যে স্বীকার করছেন যে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছি। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর কল্লা কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'নির্বাচন কমিশন বসে বসে তামাশা দেখছে। সারাদেশে বন্দুক-দা-চাপাতির যুদ্ধ লেগেছে, সেদিকে ইসির ভ্রূক্ষেপ নেই। তাদের কাজই হলো বিএনপিকে শায়েস্তা করার হুমকি দেওয়া। ইসির কাছে নির্বাচন গৌণ। তারা চাচ্ছেন মেরে-কেটে হুমকি-ধামকি দিয়ে যে যেভাবে পারে ভোটকেন্দ্রে নাবালক-সাবালক-ভোটার-অভোটার জোগাড় করে লোকারণ্য দেখাও। এটাই গণভবনের নির্দেশ, শেখ হাসিনার উৎসবমুখর নির্বাচনী মডেল।'

তিনি বলেন, 'গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে এত আয়োজন আখেরে কোনো কাজে আসবে না। ভোট নাটক যতই করেন কোনো লাভ নেই। শেখ হাসিনা বাস্তবে দেশকে স্থায়ীভাবে একটি নির্বাচনবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।'

সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, 'জনগণ ভোট নাটক বানচাল করে আপনাদের পতন ঘটাবেই। জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে আওয়ামী পরিকল্পনা তছনছ হয়ে যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিএনপিসহ সব দলকে বাদ দিয়ে এই পাতানো নির্বাচনের অন্যতম মদদদাতা হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশের নাম সর্বজনবিদিত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। ভারতীয় কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা চান, বাংলাদেশের গণতন্ত্র-মানুষের অধিকার চান না। এখন তাদের থলের বেড়াল বের হতে শুরু করেছে। ভারত মনোনীত প্রার্থীরা বীরদর্পে বলছেন, "আমাকে ভারত মনোনয়ন দিয়েছে।আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি"।' 

মেহেরপুর-১ (মুজিবনগর, সদর) আসনের সংসদ সদস্যের এক বক্তব্যের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'তিনি বলেছেন যে, "আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।" তাহলে ভারত এখন তাদের এদেশীয় অনুচরদের নমিনেশনও দিচ্ছে? অথচ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, প্রতিবাদেরও সাহস পায় না সরকার বা নির্বাচন কমিশন। আমরা জানতে চাই প্রফেসর আব্দুল মান্নানের মতো আর কে কে ভারতের প্রার্থী তার তালিকা প্রকাশ করা হোক। দেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান গণতন্ত্র হত্যার জন্য ভারতের প্রার্থীদের বিজয়ী করার এই পাতানো নির্বাচনে কেউ ভোট দেবেন না। দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে না চাইলে ভোট বর্জন করুন। তারা নির্বাচিত হলে দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়াটা অসম্ভব কিছু না।'

তিনি বলেন, 'পুলিশের দাবি, গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইন কেটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মূলে নাকি ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির। মিথ্যাচারেরও একটি সীমা থাকে। পুলিশের দুরভিসন্ধিমূলক ও কল্পিত নির্দেশনার এমন নাটক তারা নিয়মিত করছে। ভুয়া পাতানো নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসও সরকারের লোকজনের পরিকল্পিত ও পাতানো নাটক। এ পর্যন্ত যারা ধরা পড়েছে তাদের অনেকে সরকারি দলের লোকজন। আগুন সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের মজ্জাগত।'

'বিএনপি সহিংসতা ঘৃণা করে' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের আটক করে, গুম করে, নির্যাতন চালিয়ে, শেখানো বুলি দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে যারা মনে করছেন যারা পার পেয়ে যাবেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago