নতুন উদ্বেগ হয়ে উঠতে পারে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের খরচ বৃদ্ধি

বিদেশি ঋণের সুদ
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে সরকারের খরচ চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ঢাকা মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে থাকায় সম্প্রতি এগুলোর অর্থ বরাদ্দ বেড়েছে।

এ ছাড়াও, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তার জন্য উন্নয়ন অংশীদাররা দ্রুত ঋণ দেওয়ায় সরকার গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য বাজেট সহায়তা পেয়েছে।

তহবিলের মূল অর্থ পরিশোধ ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শুরু হয়। এর মেয়াদ সাধারণত ২০ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত থাকে। তবে ঋণ বিতরণের পর সুদ পরিশোধ শুরু হয়ে যায়। তাই, বাংলাদেশের জন্য সুদের খরচ বাড়ছে।

সুদের খরচ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো বাজারভিত্তিক ঋণের সুদের হারও বেড়েছে।

দেশে রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ার মধ্যে গত ১৮ মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অন্তত ২৫ শতাংশ কমেছে। এ কারণে টাকার হিসাবে সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে।

'২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইতিবাচক দিক হচ্ছে উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণ প্রতিশ্রুতি অনেক বেড়েছে। এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।'

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ পরিশোধে খরচ করেছে ১৪ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধিত আট হাজার ৪৩০ কোটি টাকার তুলনায় তা ৭৪ শতাংশ বেশি।

ইআরডির মতে, বেশি পরিমাণ সুদ দেওয়ার ফলে জুলাই থেকে নভেম্বরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৫১ শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এরে পরিমাণ ছিল ৮৮০ মিলিয়ন ডলার।

আসল ও সুদ পরিশোধ ৬৪২ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করা হয়।

এ দিকে, বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ বাড়লেও এর ব্যবহার বাড়ছে না। বরং জুলাই-নভেম্বরে ঋণ বিতরণ ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বিদেশি তহবিল ব্যবহারের কথা বলে আসছে, যাতে তা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২৭ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০২০-২১ সালের রেকর্ড ৪৬ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক কম।

ইআরডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তহবিল থেকে খরচের গতি ধীর। নির্বাচনের পর এর গতি আরও বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, '২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইতিবাচক দিক হচ্ছে উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণ প্রতিশ্রুতি অনেক বেড়েছে। এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণ ছিল ১৬৬ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৪ বিলিয়ন ডলার। বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে এসেছে যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার ও ২৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের সর্বশেষ ডেট সাসটেইনেবল অ্যানালাইসিস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কম ঝুঁকিতে আছে।

তবে রাজস্ব আদায়ের তুলনায় ঋণের অনুপাত ঝুঁকির মধ্যে আছে।

আইএমএফ বলেছে, সারা বিশ্বে মুদ্রানীতি কঠোর হওয়ায় ও টাকার তীব্র অবমূল্যায়নের কারণে সুদের হার বেড়ে যাওয়া এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

3h ago