রাজবাড়ী

রাস্তা বন্ধ করে প্রভাবশালীর টিনের বেড়া, দুইদিন ধরে অবরুদ্ধ ৩ পরিবার

রাজবাড়ীতে চলাচলের পথের ওপর প্রভাবশালীরা টিনের বেড়া দেওয়ায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তিনটি পরিবার। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

রাজবাড়ী পৌর এলাকার ধুঞ্চি গ্রামের গোদারবাজার এলাকায় তিনটি পরিবারের চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। এর ফলে গত দুই দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে তিনটি পরিবার।

গত শনিবার ওই গ্রামের নেছারউদ্দিন খোকা এবং প্রভাবশালী আহসানউল্লাহ মুকুলের ৩১ শতাংশ জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই দাবি করেছে জমিটি তাদের।

মূল রাস্তা থেকে প্রায় দেড়শ ফুট দূরে নেছারউদ্দিন খোকার বাড়ি। একটি সরু পথ দিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা চলাচল করেন। এই পথ ব্যবহার করেন আরও দুইটি পরিবার। এই পথের ওপরই বেড়া দিয়েছেন আহসানউল্লাহ মুকুল।

আজ দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের গোদারবাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী-গোদার বাজার সড়কের ডান পাশে টিন ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ১৭ শতাংশের মতো জমি। এই জমির উত্তরপাশ দিয়ে চলাচল করতেন তিনটি পরিবারের সদস্যরা। রাস্তায় বেড়া দেওয়ায় তারা আর বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।

দুই দিন ধরে অবরুদ্ধ নেছারউদ্দিন খোকা বলেন, পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে তারা এখানে বসবাস করছেন। ১৯৪১ সালে তার বাবা মোট ৫৫ শতাংশ জমির মধ্যে ১২ শতাংশ বিক্রি করেন আহসানউল্লাহ মুকুলের পূর্ব পুরুষের কাছে। বাকি জমি তারা ভোগ দখল করছিলেন। ২০০০ সালের দিকে আহসানউল্লাহ মুকুল দাবি করেন ৩১ শতাংশ জমি তাদের। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলা চলছে। শনিবার সকালে আহসানউল্লাহ মুকুল তার লোকজন এনে রাস্তায় বেড়া দিয়ে সব গাছপালা কেটে ফেলেন। এতে মোট তিনটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, সিএস খতিয়ান অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৫১ শতাংশ। দুটি দাগে এই জমি। আরএস ৫০০ নম্বর দাগে জমির পরিমাণ ৩১ শতাংশ এবং আরএস ১১২৪ নম্বর দাগে জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ। ৫০০ নম্বর দাগ রাস্তার পাশে। রাস্তার পাশের এই দাগের ১২ শতাংশ জমি প্রতিবেশী আহসানউল্লাহদের দখলে রয়েছে। অপরদিকে ১১২৪ নম্বর দাগের ১২ শতাংশ জমির আমাদের ও বাকি আট শতাংশ জমি আহসানউল্লাহদের। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিপক্ষরা ৫০০ নং দাগের সম্পূর্ণ জমি নিজেদের দাবি করে বেড়া দিয়েছেন। কিন্তু দাবির পক্ষে তারা কোনো দলিল বা কাগজপত্র দেখাচ্ছেন না।

নেছারউদ্দিন খোকার ছোট ভাই নেহাল আহমেদ জানান, বাড়িতে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করি। আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প কোনো রাস্তাও নেই। জন্মের পর থেকে এই রাস্তা আমরা ব্যবহার করছি। রেকর্ড সংশোধের জন্য ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নিজেদের ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে।

অভিযুক্ত আহসানউল্লাহ মুকুলের দাবি, এই জমি ১৯৬১ সালে নেছারউদ্দিন খোকার দাদার কাছ থেকে কিনে নেন আমার বাবা। তারা এটা কিছুতেই মানতে চান না। তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। স্থানীয়ভাবে সালিশে বসে মীমাংসা করতে গেলেও তারা তার মানেন না। এ কারণে আমরা আমাদের জমি দখলে নিয়েছি।

মামলা চলাকালে জমির দখল কেন নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা একটা মামলা শেষ হতে না হতে আরেকটা মামলা দেয়। এই জমি নিয়ে মামলায় আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে ওই জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা দখল নিয়েছি।

তবে জমির প্রকৃত মালিক যারাই হোক না কেন রাস্তা আটকে দেওয়াকে সমর্থন করছেন না এলাকাবাসী। তাদের একজন মো. হিরণ (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মামলার রায় যাই হোক—চলাচলের রাস্তা দেওয়া মানবিক দায়িত্ব। রাস্তা না রেখে জমি দখল করে তারা খারাপ কাজ করেছেন। প্রতিবেশী মো. মিলন হোসেন, রফিক শেখ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন দোকানদারও একই কথা বলেন।

পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওই পরিবারগুলো অবরুদ্ধ হয়ে আছে—বিষয়টি সেরকম নয়। ভুক্তভোগীদের আমরা আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ভার্চুয়াল মিটিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago