‘আগে রাতে ভোট কারচুপি...এটা তো হয়েছে, এবার সর্বোচ্চ ভালো নির্বাচন হয়েছে’

‘আগে রাতে ভোট কারচুপি...এটা তো হয়েছে, এবার সর্বোচ্চ ভালো নির্বাচন হয়েছে’
আবদুল মোবারক। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরি থেকে যুগ্মসচিব হিসেবে ২০০৫ সালে অবসরে যান আবদুল মোবারক। ২০০৯ সালে আইন কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি। এরপর ২০১২-২০১৭ মেয়াদে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন প্রখ্যাত এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও আইনজ্ঞ।

ডেইলি স্টার: এবারের নির্বাচন নিয়ে আপনার মত জানতে চাই।

আবদুল মোবারক: এবারের নির্বাচন সর্বোচ্চ ভালো নির্বাচন হয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে ব্যালট পেপার নির্বাচনের দিন সকালে পাঠানো হয়েছে, যাতে রাতে ভোট কারচুপি করতে না পারে।

ডেইলি স্টার: তার মানে কি এর আগে রাতে ভোট কারচুপি হয়েছে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়?

আবদুল মোবারক: হ্যাঁ, কারচুপি হয়েছে অনেক জায়গায়। জোর যার মুল্লুক তার। যার যেখানে জোর আছে, সেখানে কারচুপি হয়েছে।

ডেইলি স্টার: ব্যালট পেপার সকালে পাঠানোর যে প্রয়োজন হলো, তাতে আগের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল কি না?

আবদুল মোবারক: প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছু নেই। আগে কারচুপি হয়েছে, সেটা তো ব্লাইন্ডলি অস্বীকারও করা যাবে না। আমি চেয়ারে বসছি দেখে খালি অস্বীকার করে গেলাম, সেটা তো কথা হলো না। রাতে ভোট কারচুপি...এটা তো হয়েছে।

ডেইলি স্টার: এবারের নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধীদল নেই। এবার তো ভোট কারচুপির প্রয়োজনও ছিল না, ছিল কি?

আবদুল মোবারক: প্রধান বিরোধীদল না থাকলেও কারচুপির প্রয়োজন হয়। কত বড় বড় লিডার হেরে গেছেন, মন্ত্রীও হেরে গেছেন, কারচুপি হলে তো তারা হারতেন না।

ডেইলি স্টার: প্রধান বিরোধীদল নির্বাচনে না থাকাটা...

আবদুল মোবারক: প্রধান বিরোধীদল বলতে বিএনপিকে বোঝাতে চাচ্ছেন?

ডেইলি স্টার: হ্যাঁ।

আবদুল মোবারক: বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যে দলের জাতীয় সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, সেটা কোনো বিরোধী দলই নয়।

ডেইলি স্টার: তারপরও রাতে ভোট হয়ে থাকলে সেই নির্বাচনটা তো বড়ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রইল?

আবদুল মোবারক: ফেইট অ্যাকম্পলি (ভাগ্য মেনে চলা) বলে একটা কথা আছে। অর্থাৎ যেটা হয়ে গেছে, গেছে।

ডেইলি স্টার: যেমন?

আবদুল মোবারক: জিয়াউর রহমান মিলিটারি শাসন চালিয়েছেন, এরশাদ মিলিটারি শাসন চালিয়েছেন, এগুলো তো অস্বীকার করা যাবে না। খন্দকার মোশতাক দেশের প্রেসিডেন্ট ছিল, ইতিহাস থেকে এসব বিষয় মোছা যাবে না।

ডেইলি স্টার: তাহলে আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষা কি সামরিক শাসনামল থেকে নেব?

আবদুল মোবারক: যেটা হয়েছে সেটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আমি এটা সমর্থন করি না।

ডেইলি স্টার: তাহলে?

আবদুল মোবারক: আমি সামরিক সরকারের আমলে চাকরি করেছি। কিন্তু সেই আমল সমর্থন করি না, এটা আইন সম্মত না।

ডেইলি স্টার: গণতান্ত্রিক আমলে যদি কারচুপির অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে?

আবদুল মোবারক: সেটাকেও আমি সমর্থন করি না। এটা হওয়া উচিত না। এবারের নির্বাচন কমিশনকে বিশেষ ধন্যবাদ যে তারা সুন্দর নির্বাচন করেছে।

ডেইলি স্টার: বিরোধীদল যে নির্বাচনে এলো না?

আবদুল মোবারক: এরকম বিরোধীদল বহুবার নির্বাচনে আসবে না, সেজন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। এই উপমহাদেশে ১৯২০ সালে হওয়া প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ অংশ নেয়নি। তার জন্য নির্বাচন থেমে থাকেনি।

ডেইলি স্টার: আমরা কি শত বছর আগের উদাহরণের সঙ্গে এই সময়কে তুলনা করব?

আবদুল মোবারক: অবশ্যই, এগুলো তো ইতিহাসের শিক্ষা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মওলানা ভাসানী (তার নেতৃত্বাধীন দল) অংশ নেননি, তাই বলে নির্বাচন হবে না, তা হয় না।

ডেইলি স্টার: ১৯৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে তো প্রশ্ন ছিল না...

আবদুল মোবারক: কিছু লোক প্রশ্ন করবে। কিন্তু সেই প্রশ্ন যৌক্তিক হতে হবে।

ডেইলি স্টার: এরকম নির্বাচন হলে আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী?

আবদুল মোবারক: রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়াপনার দিকে যাচ্ছে...

ডেইলি স্টার: এমন নির্বাচনের কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর দেউলিয়াপনার কথা বলছেন। আবার সেই নির্বাচনকে আপনি টপ ক্লাস নির্বাচন বলছেন। এটা কি স্ববিরোধিতা হয়ে গেল না?

আবদুল মোবারক: নির্বাচন যেটা হয়েছে সেটা টপ ক্লাস। এই দেশে এর থেকে ভালো নির্বাচন হয় না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এটা আমার দৃঢ় মত।

ডেইলি স্টার: কিন্তু এই নির্বাচনের কারণে ভবিষ্যৎ ভালো না বা দেউলিয়াপনার কথা বলছেন, তাহলে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায় কার?

আবদুল মোবারক: এই দায় রাজনৈতিক নেতাদের।

ডেইলি স্টার: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আবদুল মোবারক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago