সারের বাড়তি দাম ও কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি, ইরি-বোরো উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর গ্রামে কৃষক বোরো ধান রোপণ করছেন। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নোয়াখালী জেলার ৯ উপজেলায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৮২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর এবং উফশী ১৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমি।

নোয়াখালীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় জানায়, জেলায় ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন ধানে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ জেলার চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সদর, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় ইরি-বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌষের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ধানের জমি প্রস্তুত, সার ছিটানো ও ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। 

দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চলতি বছর বোরো ধান চাষে অধিক ঝুঁকছেন। 

তবে তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ধানের উৎপাদন কমে যাবে। চলমান কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ধানগাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের খরচের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। 

সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষক সুধীর চন্দ্র দাস (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অন্যের জমি চাষ করে আসছেন। গত বছর তিনি ৭০ শতাংশ জমিতে ইরি-বোরো চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। নিজের খোরাকি রেখে ৪০ মন ধান বিক্রি করেছেন। প্রতি মন ১২০০ টাকা বিক্রি করেছেন। 

সুধীর চন্দ্র চলতি বছর ১০০ শতক জমিতে ধান চাষ করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রায় ১০০ মন ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। কিন্তু সারের দাম ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'সারের দাম ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে যাওয়ায় খরচ পোষানোর শঙ্কায় আছি। একজন শ্রমিকের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দৈনিক মজুরি ৮০০ টাকা। সেইসঙ্গে রয়েছে দুই বেলা নাস্তা ও দুপুরের খাবার।' 

চাটখিল পৌরসভার সুন্দরপুর মহল্লার কৃষক নুর মোহাম্মদ (৫০) বলেন, 'এখন ইরি-বোরো চাষের ভরা মৌসুম। তিন একর জমিতে ধান চাষ শুরু করেছি। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিক নিয়ে মাঠে চাষ ও জমি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। শ্রমিকের অভাব। এছাড়া, জ্বালানি তেল, সার ও শ্রমিক মজুরির অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনের খরচ বহুগুণ বেড়ে যাবে।'

অভিযোগ করে এই কৃষক বলেন, 'সারের অতিরিক্ত দামের কারণে কৃষক দিশেহারা। চাটখিল পৌর বাজারে ইউরিয়া সার প্রতিকেজি ২৯-৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন যথাযথ তদারকি না করায় সার ব্যবসায়ীরা ধানচাষের ভরা মৌসুমকে পুঁজি করে কৃষকদের কাছ থেকে সার বিক্রিতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।' 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ছিল ২০ টাকা। চলতি বছর তা বেড়ে ২৭ টাকা কেজি করেছে সরকার।

তবে তারা সারের বাজার তদারকি করে দেখেছেন, নোয়াখালীতে প্রতি কেজি সার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২-৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে শ্রমিকের মজুরি গত বছরের তুলনায় বাড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহিদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানুয়ারি মাস পুরোটাই ইরি-বোরো চাষ চলবে। বাজারে পর্যাপ্ত সার আছে। সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' 

সারের অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলায় পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে। নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate alleged corruption, irregularities and criminal activities in the last three general elections.

1h ago