৩০ পেরিয়েও জমজমাট আল রাজ্জাক রেস্তোরাঁ

আল রাজ্জাক রেস্টুরেন্ট
ছবি: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

পুরান ঢাকার নর্থ-সাউথ রোডে (আলুবাজার) অবস্থিত বিশাল পরিসরের একটি রেস্তোরাঁ। তাদের আছে সুইটমিট ও বেকারিও। লাল ব্লক লেটারে জ্বলজ্বল করে নাম 'আল রাজ্জাক রেস্টুরেন্ট'। তার দুপাশে দুজন মানুষের মুখাবয়বের ছবি।

দোকানে ঢুকতেই দেয়ালে চোখে পড়ে হাতে আঁকা একজনের ছবি। ক্যাশ কাউন্টারে বসা ম্যানেজার মো. সোহাগ জানালেন, তিনিই এই রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হোসেন মোল্লা। পাওয়া গেল দোকানের নামফলকে দুই পাশে থাকা দুটি ছবির পরিচয়ও। ডানদিকে হোসেন মোল্লার অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সের একটি ছবি ও বামদিকে তার পুত্র উজ্জ্বল হোসেনের ছবি।

পুরান ঢাকা
আবদুর রাজ্জাক (বামে) ও হোসেন মোল্লা (ডানে)। ছবি: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

হোসেন মোল্লা দোকানটি শুরু করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। সুপরিকল্পিতভাবেই বড় পরিসরের জায়গা নিয়ে অন্তত ৫০-৬০ জন মানুষের বসার ব্যবস্থা রেখে শুরু করেন দোকান। শুরু থেকেই দোকানে রসনাবিলাসের নানান পদ শোভা পেতে থাকে।

দোকান শুরুর পর থেকেই রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান ও বেকারি হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলতে শুরু করে। মিষ্টির দোকানটির দেয়ালে চোখে পড়ে পাশাপাশি দুটো ছবি। ডান পাশেরটি হোসেন মোল্লার, আর বাম পাশেরটি তার বাবা আবদুর রাজ্জাকের। তার নামেই রেস্তোরাঁটির নাম আল-রাজ্জাক।

আল রাজ্জাক
আল রাজ্জাকের চায়ের রয়েছে সুখ্যাতি। ছবি: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

রেস্তোরাঁটিতে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে কর্মযজ্ঞ। মো. সোহাগ জানান, প্রতিদিনই ১৮ ঘণ্টা খোলা থাকে রেস্তোরাঁ। সকালের নাস্তায় থাকে খাসির কলিজা, পায়া, ব্রেন মসলা, সাদা চিকেন স্যুপ ও খাসির ভুনা খিচুড়িসহ বাহারি সব আইটেম।

দুপুর ও রাতের খাবারে খাসির লেগ রোস্ট, খাসির গ্লাসি, খাসির রেজালা, ভাত, সাদা পোলাও, মুরগির রোস্ট পোলাও, স্পেশাল কাচ্চি বিরিয়ানি, দই, ফিরনিসহ রকমারি আইটেমের সমাহার থাকে। বিকেলে পাওয়া যায় নানরুটি, ফালুদা। এ ছাড়া রয়েছে নানা রকম ফলের জুসের স্বাদ নেওয়ার সুযোগও।

সোহাগ বলেন, 'প্রতিদিনই টাটকা বাজার করে রান্না করা হয়। আমাদের এখানে সব আইটেমই ভালো চলে। তবে সকালের নাস্তায় কলিজা, পায়া, ব্রেন আর দুপুর ও রাতে খাসির লেগরোস্ট, গ্লাসি, কাচ্চি, রেজালা বেশি বিক্রি হয়।'

মিষ্টির দোকানে বসা সাজ্জাদ মোল্লা জানান, এখানে প্রায় ৩০ প্রকারের মিষ্টি আছে। রসের মিষ্টি, কালো কদম, গোলাপজাম, রসমালাই, জাফরানি মালাইচপ উল্লেখযোগ্য। রেস্তোরাঁয় যেমন সুস্বাদু নানা আইটেম তৈরি হয়, তেমনি খাওয়া শেষে কেউ মিষ্টির স্বাদ নিতে চাইলেও তা খুব ভালোভাবেই পূরণ করা যায়।

বেকারিটিতে গিয়ে দেখা গেল, লাঠি বিস্কিট, গোল বিস্কিট, হরলিকস বিস্কিটসহ নানা ধরনের বিস্কিট ও বেকারির বানানো ওভালটিন কেক রয়েছে। সেখানে থাকা বিক্রয়কর্মীরা তথ্যের জন্য ম্যানেজারেরই শরণাপন্ন হতে বললেন।

আবার ফিরে আসা মো. সোহাগের কাছে।

তিনি বলেন, 'কেক ও বিস্কিট আমাদের নিজস্ব কারখানাতেই তৈরি হয়। পুরান ঢাকাতেই কারখানা। সেখানে প্রতিদিন কাজ চলে।'

'আমাদের এখানে দোকানের কর্মচারি আছেন ৪০ জনের মতো। তারা কঠোর পরিশ্রম করেন। হোটেলের শুরুতে যিনি বাবুর্চি ছিলেন, তিনি কয়েক বছর হলো মারা গেছেন। তার সাগরেদ এখন রান্নার কাজে মূল ভূমিকা পালন করেন', যোগ করেন তিনি।

বাবুর্চির নামটা মনে করতে পারেননি সোহাগ। তবে ক্যাশে বসা আরেক কর্মী সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মেহরাব জানান, বর্তমান বাবুর্চির নাম এমডি নাসির। তিনি এখন রান্নার মূল দায়িত্বে। দোকানের শুরু থেকেই তিনি সহকারী হিসেবে ছিলেন। এখন তিনিই হেড বাবুর্চি। জানা গেল, বাবুর্চির হাতযশের কারণেই এখনও খাবারের আইটেমগুলোয় নব্বই দশকের সেই স্বাদ অনেকটা অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

হোসেন মোল্লা ২০১২ সালে মারা যান। বর্তমানে তার স্ত্রী দুলারী হোসেন ও দ্বিতীয় পুত্র উজ্জ্বল হোসেন রেস্তোরাঁটি পরিচালনা করছেন। রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন আশপাশের অনেকেই। মেহরাব জানান, তারা বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের জন্যও প্রচুর অর্ডার পান।

রেস্তোরাঁয় দুজন সঙ্গীসহ খেতে এসেছিলেন মো.কবির হোসেন। 

কবির বললেন, 'খাবার আমার বেশ ভালো লেগেছে। নান আর চিকেন মোসল্লামের স্বাদ নিলাম। তবে আমার কাছে পরিমাণটা দাম অনুপাতে একটু কম মনে হয়েছে।'

রেস্তোরাঁটির আরেকটি বড় আকর্ষণ পবিত্র রমজানের ইফতার ও সেহরিতে তাদের মুখরোচক সব আইটেমের সমাহার।

মেহরাব জানালেন, রমজান মাসে হোটেল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। তখন দুপুরের পর ইফতার আইটেম ও রাত একটার পর থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত সেহরির ব্যবস্থা থাকে।

জানা গেল, এক্ষেত্রে খাসির লেগরোস্ট, গ্লাসি (হলুদ ও ঝালবিহীন মোগল ধরনের রান্না), রেজালা, মোরগ মোসল্লামের চাহিদা বেশি থাকে। আল রাজ্জাকে সেহরি করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। রাত আড়াইটার ভেতরই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রেস্তোরাঁ।

এই রেস্তোরাঁয় সমাগম ঘটে হাজারও মানুষের। রেস্তোরাঁ, সুইটমিট ও বেকারি তিনটি স্থানেই লোকের ভিড় তাদের জনপ্রিয়তার কথা জানান দেয়। ৩০ বছর পূর্ণ করে ৩১ এ পা রাখা আল রাজ্জাক রেস্তোরাঁ এখনও ছুটছে। তাদের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী সোহাগ, মেহরাব ও সাজ্জাদ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago